লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশীতে মেঘনা নদীর তীরে মাছ ঘাট দখলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে দুদিন ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। রোববার দুপুরে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ ব্যাপারী ও চরবংশী গ্রামের আতাউল গনি বাদী হয়ে রায়পুর থানায় মামলা দুটি করেন। একটি মামলার প্রধান আসামি করা হয় চরবংশী ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেনকে। অন্যটির প্রধান আসামি করা হয় সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন হাওলাদারকে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে উত্ত চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর চান্দার খালে মাছঘাট দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনার জেরধরেই শনিবার সকালে চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজার এলাকায় আবারও ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ ১০ জন আহত হয়। এ সময় স্থানীয় আ.লীগের দলীয় কার্যালয়সহ ৫টি বসত ঘর- ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। দুই মামলায় উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হোসেন,সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ১০৩ জনকে আসামি করা হয়। সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন হাওলাদার ও উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ওসমান খানের সমর্থক। এর পরের দিন শনিবার সকালে ওসমান খানের অনুসারীরা আক্তার হোসেনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত ও জখম করেন। আক্তার একই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জন আহত হন।
পুলিশ জানান,পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। অপ্রতীকর ঘটনা এড়াতে ওই ইউনিয়নের খাসেরহাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের শান্ত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীর পুরান বেড়ির মাথাও চান্দার খাল নামক স্থানে অবৈধ মাছ ঘাট বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার। এরপর শুক্রবার দুপুরে ওসমান খানের সমর্থিত লোকজন মাছঘাট দখলকরতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের জের ধরে দুদিন ধরে চলে উত্তর চরবংশীতে পৃথখ পৃথক সংঘর্ষ। দু’দিনের সংঘর্ষে এলাকা জুড়ে আতংঙ্ক বিরাজ করছে। বন্ধ রাখা হয়েছে খাসের বাজারের দোকান পাট।
জানাগেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার। পরে ওসমান খানকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই থেকে ওসমান খান ও আলতাফ হোসেনের অনুসারীদের সাথে কয়েক দফা মারামারি স্থানীয় দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করা হয়। এর জের ধরে গত শুক্রবার দুপুরে ওসমান খানের লোকজন আলতাফ হোসেনের অবৈধ মাছের আড়ত দখল করতে যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের সংঘর্ষে স্থানীয় আ.লীগের দলীয় কার্যালয় হামলা করে ভাংচুর চালিয়ে নারীসহ ১০ জনকে আহত করে হামলাকারিরা।
আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘ওসমান খানের অনুসারীরা ক্ষমতার দাপটে আমাদের বহুদিন ধরে মাছের আড়তের ব্যবসা দখলের চেষ্টা করে। দখল করতে না পেরে মাছের আড়তের কাজে নিয়োজিত লোকজনের হামলা চালায়। ওসময় তারা বাধাদিতে গিয়ে হামলায় আহত হয়। এখন উল্টো তারা আমাদের নামে মামলা দিয়েছে। বিষয়টি আমি সকলকে জানিয়েছি।’
ওসমান খান বলেন, ‘আলতাফ হোসেনের লোকজন দুই দফায় হামলা চালিয়ে আমাদের ১০-১৫ জন নেতা-কর্মীকে মারধর ও উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুরসহ ৫-৬ টি বসত ঘর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। নৌকার বিপরীতে মোটর সাইকেল মার্কায় ভোট করে হেরে গিয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও মারধর করছে সে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্থরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।