চট্টগ্রামে একের পর এক খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তিন মাসে ২০টিরও বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে অজ্ঞাতনামা লাশও উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি। অধিকাংশ হত্যা মামলার আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেই গেছে। ফলে জনমনেও আতঙ্ক বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে সিএমপি’র অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকা-ে জড়িত আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এসব হত্যাকা- বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বদ্ধ পরিকর। একাধিক সূত্র জানায়, গত ১১মে রাত ১০টায় বাকলিয়া থানার বজ্রঘোনা এলাকার মদিনা মসজিদের পাশের একটি বাসায় গুলিতে খুন হয়েছেন বুবলী আক্তার (২৯) নামের এক গৃহবধূ। ঘটনার সময় ভাইয়ের দিকে বন্দুক তাক করা সন্ত্রাসীকে আটকাতে গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। বুবলী কয়েক দিন আগে বাবার বাড়ি বজ্রঘোনার ওই বাসায় বেড়াতে আসেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহ আলম নামে এলাকার এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে হাছান নামে তাদের এক আত্মীয়ের দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই শাহ আলম রাতে হাছানকে খুঁজতে বুবলীদের বাসায় আসেন। তাকে না পেয়ে সে বুবলীর ভাই রুবেলের দিকে বন্দুক তাক করেন। এ সময় বুবলী তাকে আটকাতে গেলে গুলি করে শাহ আলম। তবে এ ঘটনায় শাহ আলম পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর আগে গত ১০ মে একদিনেই দু’টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন সন্ধ্যায় ইফতারের আগে শহরের উত্তর কাট্টলীর বড় কালীবাড়ি এলাকায় মাদকাসক্তের দায়ের কোপে নিহত হয়েছেন এক বৃদ্ধা। নিহত নারীর নাম সন্ধ্যা রানী (৬১)। সন্ধ্যায় সত্যজিত নামে এক মাদকাসক্ত হঠাৎ দা নিয়ে নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে আসে এবং রাস্তায় লোকজনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করেন। এ সময় এ বৃদ্ধা মারা যান। একইদিন মুরাদপুর পিলখানা এলাকায় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বখাটের ছুরিকাঘাতে মোস্তাক আহমেদ (৪৫) নামে এক পান দোকানির মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় আড্ডা দেওয়া নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় রাব্বী নামে এক তরুণসহ স্থানীয় কয়েকজন বখাটের সঙ্গে মোস্তাকের ছেলে নাঈমের (২০) বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে রাত ৯টায় রাব্বী দলবল নিয়ে আবার পিলখানা এলাকায় আসে এবং নাঈমের ওপর হামলা শুরু করেন। একপর্যায়ে মোস্তাক ছেলেকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে রাব্বীর সঙ্গে থাকা শাহাদাত নামের এক যুবক মোস্তাকের বুকে ছুরি মারে। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। গত ৮মে রাতে হালিশহর রামপুরা নয়াবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে ধু্রুব মজুমদার (৩০) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। ওই ভবনে বেশকিছু ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া থাকেন। সেখানে ৮ নম্বর রুমে ধ্রুব তার এক ভাগ্নেকে নিয়ে থাকতেন। তাকে কেউ খুন করতে পারেন বলে পুলিশ ধারণা করছেন। এর আগে গত ৭ এপ্রিল শহরের বক্সিরহাট এলাকায় খুন হন স্বর্ণ দোকানের এক কর্মচারী। তার নাম পুষ্পল চন্দ্র (৩২)। ক্রিকেটে জুয়া নিয়ে বন্ধুদের সাথে বিরোধের জের ধরে খুন হন তিনি। এর আগের দিন রাতে বাকলিয়ায় এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এলাকার কথিত বড় ভাই হিসেবে কিশোরদের মধ্যে প্রেম সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে গিয়ে আরেক বড় ভাইয়ের গুলিতে ওই যুবক খুন হয়েছেন। নিহতের নাম লোকমান হোসেন (৩২)। একইদিন বিকালে খুলশী থানার রেলওয়ে জাদুঘরের পাশ থেকে জানে আলম (৪৪) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ভাগিনার হাতে তিনি খুন হন বলে পুলিশ জানায়। এছাড়াও গত তিন মাসে খুন হয়েছেন অন্তত ২০জন। এরমধ্যে অজ্ঞাতনামা লাশও উদ্ধার করা হয় ১০টি। যাদের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ সময়ে বায়েজিদে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ খুনের ঘটনা ঘটে। হালিশহর থেকে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। পতেঙ্গায় এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। অক্সিজেন এলাকায় খুন হন আরো এক যুবক। অধিকাংশ হত্যা মামলার আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেই গেছে। অজ্ঞাত সাত খুনের ব্যাপারে পুরোটাই অন্ধকারে পুলিশ। নিহতদের পরিচয়ও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সুধী সমাজের মতে- খুনের পর জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং বিচারের রায় কার্যকর হলে খুনীরা এভাবে বেপরোয়া হতোনা। এজন্য আইনের শাসন খুবেই জরুরী।