লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে দিন-রাত জাল ফেলেও জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্কিত ইলিশ। আর মাছ ঘাটগুলোতে ইলিশের আমদানি না থাকায় আড়ৎদাররা কাটাচ্ছেন অলস সময়। জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে ঘূনিঝড় ফনির কারণে তিন চারদিন নদীতে নামিনী, এখন মেঘনায় জাল পেতে‘ নদীতে ইলিশের দেখা না থাকায় আশানুরূপ ইলিশ উঠছে না জালে। জেলার মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন চিন্তার কোন কারণ নেই, ইলিশ ভ্রমনশীল মাছ, এ সময় ইলিশের জাটকাগুলো সাগরে যায় আবার বড় হয়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টেম্বর মাসে বড় ইলিশ পাওয়া যাবে। তবে এ সময়ে অন্নান্য মাছ পাওয়া যাবে।
জানাগেছে,১ মে বুধবার থেকে ফের শুরু হয়েছে মাছ ধরা। এর আগে নিষেধাজ্ঞার কিছুদিন তাদের অভাব-অনটনের মধ্যে থাকতে হয়েছে। চাউল দেওয়া হলেও অনেক জেলেই তা পায়নি। তাদের অভিযোগ জেলে তালিকা করা হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে। এ জন্যই তারা সঠিক সময়ে চাউল জোটেনা তাদের ভাগ্যে। এ কারণে তাদের অনেকেই অভাব-অনটন সহ্য করতে না পেড়ে ও দাদনদার মৎস্য আড়তদারদের টাকা পরিশোধের চাপে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করতে হয়েছে। এখানকার স্থানীয় জেলেদের দাবী, ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে যেন সরকার তাদের নামে ১০ টাকা মূল্যে ব্যাংক একাউন্ড খুলে দিয়ে চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। এখন কয়েকজন জেলে চাউল পেলেও পাওয়ার আগে জনপ্রতিনিধিদের চাউল উত্তোলন বাবত অর্থদিয়ে সংসারে ৪০ কেজি চাল নিয়ে তা দিয়ে সংসারের অভাব মেটানো একেবারেই অপ্রতুল।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে মতে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনাল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষিত এলাকায় ১ মার্চ-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।
জেলে ও স্থানীয়রা জানান,অভিযান শেষের পর ১ মে থেকে জেলেরা জাল ও নৌকা মেরামত করে মাছধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মেঘনা নদীতে নেমেছিলেন। একদিন যেতে না যেতেই ঘূনিঝড় ফনির কারণে তিন চারদিন নদীতে নামিনী তারা। এরপর নদীতে নেমেই কেউ কেউ খালি হাতে ফিরলেও আবার জেলেদের মধ্যে কিছু জেলে মাত্র দুই হালি (৮ টি) ইলিশ পড়েছে তাদের জালে। নৌকার ইঞ্চিন তৈল ছাড়া দৈনিক ২ হাজার আড়াই হাজার টাকা খরচ আছে। তবে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মাছ কম খরচ গিয়ে দৈনিক ৪/৫ হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে তাদের। এ মাছের ওপর নির্ভর করেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় গড়ে ওঠেছে ১৫-২০টি আড়ত। এসব আড়ত ঘিরে মাছ সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান ৪০টি আইস ফ্যাক্টরি নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে।
যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। এচিত্র জেলার মজুচৌধুরীর হাটসহ মেঘনার রামগতি উপজেলার গজারিয়া,বয়ারচর,চর আব্দুল্লাহ্,তেলিরচর,আলেকজান্ডার,রায়পুর উপজেলার জালিয়ার চর,পানিরঘাট নদী এলাকা।
‘‘হতাশার ছাপ পড়ছে স্পষ্ট হয়ে চিন্তায় অস্থির কথা হয় হয় কমলনগর উপজেলার পঞ্চান্ন বয়সের জেলে আলমগীর মাঝীর সাথে। তিনি জানান,দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে যে মাছ শিকার করছে তা দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকার তেলের খরচও মিলছেনা। তাছাড়া নদীতে ইলিশ মাছ নেই বললেই চলে। তিনি আরো জানান,সারাদিনে আধা ডালা মাছ মিলে না। আগে নদীর পাড় দিয়ে পুঁটিমাছ গড়াইয়া যাইত। সার-কীটনাশক মাছ শেষ কইরা ফালাইছে।
নদীর পাড়ে চর জগবন্ধু এলাকার জেলে জয়দল (৫০) জানান,সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি নদীতে জাল ফেলেছেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে যখন বাড়ি ফিরছেন তখন তিনি দেখেন তার মাছের ডালা খালি। দার দাদনের দেনা শোধের দুচিন্তায় আছেন। নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামি দিন গুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে জীবন চালাবেন ভেবে তারা কুল-কিনারা পাবেনা তিনি। এ ছাড়া জেলেদের মধ্যে অনেকের দাবী নদীতে নব্যতা সংকটের কারণে তাদের জালে আশানরুপ ইলিশ মিলছেনা।
জেলে আবুল বাশার বলেন, জাল ও নৌকা মেরামত করে অভিযান শেষের পর মাছধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মেঘনা নদীতে নেমেছিলাম এর একদিন যেতে না যেতেই ঘূনিঝড় ফনির কারণে তিন চারদিন নদীতে নামিনী। রোববার ১২টার পর থেকে নেমে সোমবার সকাল পর্যন্ত তাদের নৌকায় মাত্র দুই হালি (৮ টি) ইলিশ পড়েছে। নৌকার ইঞ্চিন তৈল ছাড়া দৈনিক ২ হাজার আড়াই হাজার টাকা খরচ আছে। তবে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মাছ কম খরচ গিয়ে দৈনিক ৪/৫ হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে তাদের।
রামগতি মাছ ঘাটের ব্যবসায়ী মিনাজ মাঝী জানান,গত বছর এ সময়ে ঘাট থকে প্রায় দুইশ' টন ইলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যেতো। কিন্তু এ বছরতো মাছই নেই। সে কথা এখন গল্প।
কমলনগরের মতিরহাট মাছ ঘাটে গিয়ে যায়, লক্ষ্মীপুরের ৩৬ টি বড় আড়ত মাছ ঘাট এখনো সরগরম হয়নি। সোমবার বিকাল পর্যন্ত ৫ মনের মতো ইলিশ মাছ এসেছে, যার বেশিরভাগ সকালেই শেষ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ী মনছুর জানান,এক কেজির ওপরে মাছের মণ ৬৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ইলিশ কম ধরাপড়ায় ইলিশের দাম কিছুটা বাড়তি। তা না হলে বাজারে ইলিশের দাম আরো কম হতো।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাযায়, সরকারী হিসেবে জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত রয়েছে ৪২ হাজার জেলে। কিন্তু তালিকায় অন্তুভূক্ত করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার জেলের। ২৭ হাজার জেলের নাম নাই তালিকায়। এতোদিন লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনাল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষিত এলাকায় ১ মার্চ-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস,এম মহিবউল্যাহ জানান, ইলিশ ভ্রমনশীল মাছ, এ সময় ইলিশের জাটকাগুলো সাগরে যায় আবার বড় হয়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টেম্বর মাসে বড় ইলিশ পাওয়া যাবে। তবে এ সময়ে অন্নান্য মাছ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন জেলার মৎস বিভাগের এই কর্মকর্তা।