চট্টগ্রামে গার্মেন্টসে ৫৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন এবং বোনাসকে কেন্দ্র করে নানা শঙ্কা তৈরী হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১শ’৩৫টি কারখানাকে কিছুটা স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কারখানায় যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আজ বুধবার থেকে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এতে গার্মেন্টসের মালিক, পদস্থ কর্মকর্তা, প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে নিয়ে শিল্প পুলিশ ওই বিশেষ সভার আয়োজন করেছেন। শহরের আলাদা ব্লকে বিভক্ত করে এসব বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আগামি সপ্তাহে একটি মনিটরিং সেলও গঠন করা হবে। এরপরেও কেউ কেউ ধারণা করছেন যে, রোজার ঈদের আগে শ্রমিকরা বেতন-বোনাস সময় মত না পেলে শহরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।
একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহর এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ৬শ’৯৭টি গার্মেন্টস রয়েছে। এর বাইরেও ৫০৫টি রয়েছে অন্যান্য ছোট কারখানা। এখানে মোট ১হাজার ২০২টি কারখানার ৫ লাখ ৫৮ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। চট্টগ্রামের সব শিল্প কারখানার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার দায়িত্ব চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের। সাত শতাধিক পুলিশ সদস্য দুটি ইপিজেডসহ সব শিল্প কারখানার ওপর নজরদারি করে থাকেন। বছরের অন্য সময়ে তেমন শঙ্কা না থাকলেও দুই ঈদ নিয়ে শঙ্কায় থাকে পুলিশ। বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা ও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শিল্প পুলিশ ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ১শ’৩৫টি কারখানাকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব কারখানায় ৫২ হাজারের মতো শ্রমিক এবং চার হাজার কর্মচারী আছে। ৫৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে ঈদের আগে বেতন-বোনাস ঠিকভাবে দেওয়া না হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হবে বলে মনে করছে শিল্প পুলিশও।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মমতাজ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশাবাদী, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ করবেন। কয়েকটি কারখানায় কিছু সমস্যা আছে। তারা বেতন-বোনাস দিতে পারবে কি পারবে না; তা নিয়ে আমরাও নিশ্চিত নই। তবে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে যে কোনোভাবেই বেতন-বোনাসের সংস্থান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, এবারের ঈদ মাসের প্রথম দিকে হওয়ায় গার্মেন্টস মালিকদের জন্য বেশি সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টসে বেতন হয় ৮ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। কালকের মধ্যে চট্টগ্রামের সব গার্মেন্টসই এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন। অথচ সপ্তাহখানেক পরেই তাদেরকে আবার বোনাস পরিশোধ করতে হবে। এর থেকে সপ্তাহ-দশ দিনের মধ্যে মে মাসের বেতন ঈদের আগে দিয়ে দিতে হবে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ঈদ হওয়ায় ২-৩ তারিখের মধ্যে মে মাসের বেতনও দিতে হবে। ফলে আড়াই সপ্তাহের মধ্যে দুই মাসের বেতন ও একটি বোনাস পরিশোধ করতে গিয়ে গার্মেন্টস মালিকদের বিপুল অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে।
ওদিকে শ্রমিকরা জানায়, গার্মেন্টস শ্রমিকেরা পুরো বছরই কঠোর পরিশ্রম দিয়ে কাজ করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা ঈদ করবেন। তাদের বেতন-বোনাসও জরুরি। এই বিষয়টিকে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। গার্মেন্টস মালিকরা জানায়, বছরের পর বছর ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্প কারখানা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত যোগান দিয়ে আসছেন। বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্তভাবে দুই-চারটি কারখানায় বিভিন্ন সময় সমস্যা লেগেই আছে। নানা সমীকরণ মিলিয়ে একেকজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসা করতে হয়। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হলেই কেবল ডলার আসে। সেই ডলার ব্যাংকে রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন কিংবা মালিকের মুনাফা পাওয়া যায়। দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া ও একটি চেইন এখানে কাজ করে। সময় মতো চেক পাস না হতে পারে, কোনো কারণে এক-দুদিন দেরি হতে পারে, পণ্যের মূল্য না-ও আসতে পারে। আরো বিভিন্ন সমস্যায় মালিক সময়মতো শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে পারেন না। এক্ষত্রে শ্রমিকরা ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে সহযোগিতামুলক মনোভাব প্রকাশ করতে হবে। তাহলেই বিরাজমান সমস্যা থাকবেনা।