পিরোজপুর-১ আসনের (নাজিরপুর, পিরোজপুর ও নেছারাবাদ) সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালকে দুদকে তলব করা হয়েছে। রবিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে সাবেক এ এমপিকে তলব করে নোটিশ পাঠিয়েছে। ওই নোটিশে তাকে আগামী ২৩ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে। সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদকের ওই চিঠিতে বলা হয়, এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, অবৈধভাবে বেকুটিয়া সেতুর ফেরিঘাট ইজারা দেওয়াসহ টেন্ডার-বাণিজ্যের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দলীয় একটি সূত্রমতে, আ’লীগ সরকারের দুই মেয়াদে এলাকার সব উন্নয়নকাজে ১০ শতাংশ কমিশন নেন ওই এমপি। প্রতিষ্ঠানের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত সাড়ে আট বছরে শুধু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ পিরোজপুরে প্রায় ৮শত কোটি টাকার কাজ করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা জানান, একইভাবে গণপূর্ত, শিক্ষা, প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগে শত শত কোটি টাকার কাজ হয়েছে। সব কাজেই এমপি জন্য ১০ শতাংশ কমিশন রেখে দরপত্র হয়।
উল্লেখ্য, পিরোজপুর-১ আসন থেকে গত ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে জাতীয় পার্টি’র (এরশাদ) মোস্তফা জামাল হায়দার থাকার পরও তিনি আ’লীগের একক প্রার্থী হিসাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হন। তখন ওই আসনের বিএনপি জোটের প্রার্থী জামায়াতের দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে হারিয়ে তিনি এমপি হন। এরপর গত ২০১৪ সালে আ’লীগের প্রার্থী হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন আউয়াল। দু’বারের এমপি হিসাবে তিনি এলাকায় ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করেন। এসময় তিনি দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানী, টেন্ডারবাজী, নিয়োগ বানিজ্য, টিআর কাবিখার পার্সেনটিস গ্রহন সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এমন কি নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মো. নান্না মিয়ার ৮ কোটি টাকা মূল্যের একটি জাহাজ নিজের নামে লিখে নিতে চেষ্টা করেন এ এমপি। বিষয়টি নিয়ে এমপি আউয়াল ও আ’লীগ নেতা ভুক্তভোগী নান্না মিয়ার মোবাইলের কথপোকথনের অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। বিষয়টি তখন দলের ভীতর সহ সারা দেশে আলোচনার ঝড় উঠে।
সকল অর্থনৈতিক সুবিধা নিজের হাতের মুঠোয় নিতে চাইলে তারই আপন ভাইদের মধ্যে তাকে নিয়ে ব্যাপক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ভাইয়েরা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে মিটিং সহ ব্যাপক বিরুদ্ধাচরন শুরু করেন। আর এসব অনিয়মের কারনে গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি কালো তালিকা ভুক্ত হয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এ আসনটিতে তখন মনোনয়ন দেয়া হয় পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ আ’লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিমকে। তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়ে বর্তমান সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করছেন।