জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং এ জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী যাত্রী পরিবতন সমিতির সাথে আলোচনা স্বাপেক্ষে মাহেন্দ্র‘র ভাড়া নির্ধারন করে ছিল দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী ৬০ টাকা। শুক্রবার থেকে জেলা ডিজেল চালিত (মাহেন্দ্র, গ্রামবাংলা) অটোরিক্সা অটোটেম্পু মালিক সমিতি নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত ৮০ টাকা নিচ্ছেন বলে সমিতির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক জানিয়েছেন।
দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট সহ বাস টার্মিনালে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে ৩১ মে শুক্রবার থেকে। তবে এখন পর্যন্ত ঘাট এলাকায় প্রতিবারের মত নেই কোন যানজট। তৎপর রয়েছে প্রশাসন। ঘাটে যাত্রী হয়রানী বা যে কোন ধরনের অপ্রতাশিত ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষনিক ম্যাজিষ্টেট রয়েছে। সে কারণে লঞ্চ ও ফেরি থেকে নেমেই কোন ঝামেলা ছাড়াই মানুষ পরিবহনে উঠে যাচ্ছে তার গন্তব্যে।
তবে অভিযোগ রয়েছে লোকাল যাত্রীদের। তারা বলছেন মাহেন্দ্র, অটোরিক্সা চালকরা তাদের ইচ্ছামত ভাড়া নিচ্ছেন। তবে মাহেন্দ্র মালিক সমিতির সভাপতির আবু বক্কর সিদ্দিকের দাবী ঈদ উপলক্ষে ২০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে কোন দায়ভার নিবেনা সমিতি।
ঢাকা থেকে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে আসা লঞ্চের যাত্রী মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ঢাকাতে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি ঈদ ছাড়াও মাঝে মধ্যেই বাড়িতে আসতে হয়। বিগত কয়েক বছর ঈদের সময় যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এবছর তার উল্টো কোন ভোগান্তি নেই। ঢাকা থেকে একটি লোকাল বাসে রওনা সাথে সাথেই পাটুরিয়া ঘাটে লঞ্চ এ উঠতে পেরেছি। কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাটে আসার পর মাহেন্দ্র রাজবাড়ী পলাশ পাম্প পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে ১৫০ টাকা যা সাধারণের থেকে ৩ গুণ।
গত আইনশৃঙ্খলা মিটিং জেলা প্রশাসন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে রাজবাড়ী মুর্গির ফার্ম-রেল গেট পর্যন্ত মাহেন্দ্র‘র ভাড়া সর্বোচ্চ ঈদ উপলক্ষে ৬০ টাকা যার স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ৪০ টাকা। দৌলতদিয়া থেকে পাংশা ঈদ উপলক্ষে ১২০ টাকা ওই আলোচনায় নির্ধারন করা হয়- যার স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ৭০ টাকা। দৌলতদিয়া থেকে কুষ্টিয়া ঈদ উপলক্ষে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে- যার স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ১৫০ টাকা।
রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুরাদ হোসেন জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সাথে আলোচনা করে প্রতি বছরের মত এবারও ঈদ উপলক্ষে দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ীর ভাড়া স্বাভাবিক ৪০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বৃদ্ধি করে ৬৫ টাকা ও পাংশা স্বাভাবিক ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০টাকা বৃদ্ধি করে ১৫০টাকা, দৌলতদিয়া থেকে কুষ্টিয়া স্বাভাবিক ১৫০টাকা-৫০টাকা বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছি। এর থেকে যদি কোন পরিবহন ভাড়া বেশি নেয় তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রাজবাড়ী জেলা ডিজেল চালিত (মাহেন্দ্র, গ্রামবাংলা) অটোরিক্সা অটোটেম্পু মালিক সমিতির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক কে জানান, আগে নিতাম ৪০ টাকা এখন ঈদ উপলক্ষে ৬০, ৭০, ৮০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এর বেশি কেউ নিচ্ছে না যদি নেয় তাহলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। জেলা প্রশাসনের সাথে তাদের ৬০ টাকা ভাড়ার আলোচনার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন জেলা প্রশাসন আমাদের বলেছে আমরা যেন ৬০, ৭০ এর বেশি না নেই।
ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ০২ জুন ভোর থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট দিয়ে যাত্রীরা বাস টার্মিনালে পৌছালে যাত্রীর এ চাপ শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, যত বেলা বাড়ছে ততই যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন আমাদের কাছে এ পর্যন্ত কোন যাত্রী অভিযোগ করে নি যদি কেউ অভিযোগ করে আমারা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: আলমগীর হুসাইন বলেন, ভাড়ার বেশি নেওয়ার ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি। ঘাটে আমাদের ম্যাজিষ্ট্রেট আছে তারা বিষয়টি দেখছে। এ ছাড়া গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন। যাতে করে কেউ হয়রানীর স্বীকার না হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত শিপলু কে জানান, ভাড়া বেশি নেওয়ার মতো কোন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। গত আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং যাত্রী পরিবহনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সেটায় নিচ্ছে তারা। পরিবহন সমিতির সাথে দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী বাস ভাড়া ৬৫ টাকা, কুষ্টিয়া পর্যন্ত ২০০ টাকা ভাড়া। আর অটোরিক্সা অটোটেম্পু দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী ৬০ টাকা, কুষ্টিয়া পর্যন্ত ২০০ টাকা নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়। ৬০ টাকার স্থলে (মাহেন্দ্র, গ্রামবাংলা) অটোরিক্সা অটোটেম্পু মালিক সমিতির ৮০ টাকা নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়াও আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। এ সময় তিনি যাত্রী হয়রানীর স্বীকার হলে ০১৭৩৩ ৩৩৬৪০৮ নম্বরে জানানোর জন্য বলেন।