উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে চরবাসি। রাতের ঘুম হারাম করে ঘরবাড়ি ও গাছপালা সরিয়ে নিচ্ছে ভাঙনের মুখে হাজারও পরিবার। গত দু’দিনের ব্যবধানে বিশেষ করে উপজেলার হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে হাজারও একর ফসলি জমি ও হাজারও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি বাড়ার সাথে-সাথে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। নদীগর্ভে বিলিন হওয়া পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাশাপাশি ভাঙনের মুখে পরা পরিবারগুলো ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভাঙন কবলিত ও ভাঙনের পরা পরিবারগুলোকে আজও সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোন প্রকার সহায়তার ব্যববস্থা করা হয়নি। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে স্ত্রী, পুত্র ও পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
থামেছে না তিস্তার ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনের মুখে পড়েছে আরও হাজারও একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। বিশেষ করে হরিপুর, বেলকা চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তানদীতে পলি জমে তিস্তার মুলনদী একাধিক শাখায় পরিণত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বাড়ার সাথে সাথে ওইসব শাখা নদীতে তীব্র ¯্রােত দেখা দিয়েছে। স্্েরাতের কারণে উজানের ভাঙনে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। বর্তমানে তিস্তার চরাঞ্চলে বেগুন, মরিচ,পটল, কড়লা, শষা, ঢেড়স, তোষাপাটসহ নানাবিধ ফসলের সমাহার দেখা দিয়েছে। কিন্তু সর্বনাশা তিস্তা সেসব ফসল ঘরে তুলতে দিচ্ছে না। কথা হয় হরিপুর ইউনিয়নের মাদারীপাড়া গ্রামের আবদুল ওয়াহেদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন তিস্তার তীব্র ভাঙনে চরাঞ্চলবাসি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় নদী ভাঙার কথা নয়। অথচ গত চার মাস থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙন চলছে। যার কারণে হরিপুর ইইনয়নের হাজারও একর ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। কিন্তু এ বছর নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। হরিপুর ইউপি নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, নদী ড্রেজিং এবং খনন করা ছাড়া নদী ভাঙন রোধ করা কোন ক্রমে সম্ভব নয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সোলেমান আলী জানান নদী ভাঙনের বিষয়টি তিনি জানেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করতে বলা হয়েছে।
এদিকে গত ২ মে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার তিস্তানদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন তিস্তা নদীকে রক্ষা এবং ভাঙন রোধ করতে হলে নদীর গতিপথ একমুখী করতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছেন।
অপরদিকে গত ২০ মার্চ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি কুড়িগ্রাম হতে নৌ-পথে স্প্রিড বোর্ডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং কাপাসিয়া ইউনিয়নের কছিম বাজার খেয়াঘাটে স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।