মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন ভাই প্রদীপ কুমার গোস্বামী। একই সাথে স্বামী দেবব্রত চক্রবর্তী গুলি বিদ্ধ হয়। ভাইকে হারিয়ে গুলিবিদ্ধ স্বামীকে নিয়ে প্রাণ ভয়ে নিজের বাপের ভিটা ছেড়ে অন্য জেলায় চলে আসেন ধীরা গোস্বামী। এরপর একে একে কেটে গেল ৪৮টি বছর। নিজ জেলা ফরিদপুরের মধুখালীর বর্তমান বাগাট ইউনিয়নের ঘোপঘাটে রাজাকারদের দখলে রয়েছে আজও তাদের পরিবারের শত শত শতাংশ জমি। প্রাণ ভয়ে ঐ সময় ধীরা গোস্বামী রাজবাড়ি জেলায় চলে আসার পর আজও পাননি তার ভাই হত্যার বিচার। মেলেনি শহীদ পরিবারের বা গুলিবিদ্ধ স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতির পিতার স্বাক্ষরিত শোক বার্তার একটি চিঠি ও ২০০০ টাকার একটি চেক প্রাপ্ত হলেও আজ অবধি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারে স্বীকৃতি। ধীরা গোস্বামী বলেন যুদ্ধের সময় আমি আমার মায়ের পেটের ভাই প্রদীপ কুমার কে হারিয়েছি। মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের ঘোপঘাট গ্রামের রাজাকারেরা ঘটনার দিন দুপুরে ভাত খাওয়ার সময়ে ধরে নিয়ে আমার ভাইকে নিমর্ম ভাবে হত্যা করে। আমার স্বামী দেবব্রত চক্রবর্তীকে গুলি করে মারাত্তক ভাবে জখম করে, পরে আমাদেরকে বাপদাদার ভিটা থেকে প্রানের হুমকি দিয়ে বিতাড়িত করে। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার সহ আমার পিতার বেদখল হওয়া জমি ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই। যুদ্ধ কালীন আহত দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন- যুদ্ধে আমি আমার শশ্বুর বাড়ী এলাকার রাজাকার দের হাতে গুলি বিদ্ধ হই আজও আমার বাম পিঠে গুলির ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। আহত অবস্থায় আমি ভারতের কল্যানী কাম্পে প্রশিক্ষন গ্রহন করি। মুক্তি যুদ্ধের পরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরলেও আমাদের কথা কেউ শোনেনি। কিন্তু অজানা কারণে পাইনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। মুক্তিযুদ্ধের সেইদিনের ঘটে যাওয়া লোমহষর্ক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী মৃণাল কান্তি অধিকারী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুন্সী মোস্তফা কামাল বলেন ঘটনার দিন দুপুর বেলায় স্থানীয় রাজাকার ও বিহারীরা মিলে প্রদীপ কুমার গোস্বামীকে গুলি করে হত্যা করে। আর তার বোনের জামাই দেবব্রত চক্রবর্তীকে মৃতু্যূ ভেবে গুলি করে চলে যায়। এলাকার ৯০ বছরের বৃদ্ধ সুর্য বেগম বলেন আমাদের সামনে রাজাকারেরা প্রদীপ কুমার ও তার বোন জামাইকে ধরে নিয়ে যায়, সে সময় রাজাকারেরা নারীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায় সে দৃশ্য আজও আমার চোখের সামনে ভাসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ সাত্তার (৮৩) বলেন ১৯৭১ সালে রাজাকারেরা প্রদীপ কুমারকে হত্যা করে, পরবর্তী সময়ে তাদের বাপ দাদার বসত বাড়ি দখল করে নেয়, সরকারের কাছে আমার দাবি তাদের বেদখল হওয়া জমি এবং তাদের পরিবারকে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেয়া হোক। বাগাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছে তাদের যোগ্য সম্মান পাওয়া উচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠি ও ২০০০ টাকা প্রাপ্ত হলেও তারা আজ পর্যন্ত শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পায় নাই। আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাই তাদের পরিবারের শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেয়া হোক।