ঢাকা রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত নারী তাসলিমা বেগম রিনু’র (৪০) গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে রায়পুরে চলছে শোকের মাতম।এর আগে শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রিনু’র নামে এক মহিলা নিহত হন।
রোববার (২১ জুলাই) নিহতের গ্রামের বাড়ি উপজেলার সোনাপুর গ্রামে বইছে স্বজনদের আহাজারি।
সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে নিহতের স্বজনরা জানান, দুই বছর পূর্বে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় তাসলিমা বেগম রিনু’র। এরপর থেকে সন্তানদের নিয়ে মহাখলী ওয়ারলেস এলাকার একটি বাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। নিহত রিনু’র লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন মাঝি বাড়ির মৃত. আবদুল মান্নানের মেয়ে। তিনি আড়ং নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে চাকরি করতেন। তার মাহিন হোসেন তার ১১ বছরের এক ছেলে ও তুবা তাসনিম নামে চার বছরের এক মেয়ে রয়েছে। মিথ্যা অজুহাতে ছেলে ধরা সন্দেহে নিহত নারী তাসলিমা বেগম রিনু’র হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচারের দাবি করেছেন তারা।
নিহতের বোন সেলিনা আক্তার জানান, তাসলিমা ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে ঢাকায় বসবাস করতেন। সেখানেই উত্তর বাড্ডা এলাকার তসলিম উদ্দিনের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গত দুই বছর পূর্বে পারিবারিক কলহের কারণে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। শনিবার (২০ জুলাই) তাসলিমার সন্তান তুবা তাসনিমকে (৩) স্কুলে ভর্তি করার জন্য খোঁজ নিতে উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সে সময় স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। এখন তার সন্তানদের কি হবে, কোথায় পাবে তারা তাদের মাকে। কাকে তারা আম্মু বলে ডাকবে, কাকেই বা জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে। এমন কথাগুলো বলেই তিনি কান্নায় জড়িয়ে আহাজারি করে নিহতের বোন সেলিনা।
তাসলিমার চাচাতো ভাই হারুনুর রশিদ জানান, তার চাচাতো বোন তাসলিমা শিক্ষিত মেয়ে। সে শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়েই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এত অল্প বয়সে সে দুনিয়া থেকে চলে যাবে, তা ভাবতে পারিনা। এ সময় তাসলিমাকে মিথ্যা অজুহাতে যারা মেরে ফেলেছে।
তিনি আরো জানান,এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যাতে তাসলিমার মত অন্য কাউকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে না হয়। এ হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য রিয়াজ উদ্দিন জানান, নিহতের মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আনা হচ্ছে। পারিবারিক কবস্থানে তাকে দাফন করা হবে। তবে তিনিও এ ঘটনার সুষ্ট বিচার দাবি করেন তিনিও, ছেলে ধরা গুজব রটানাকারীকে শনাক্ত করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বাড়ী নিহত তাসলিমা বেগম রিনু’ ‘‘এ হত্যাকান্ড দু:খ প্রকাশ করেছেন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। তিনি জানান, এ রকম গুজব ছড়িয়ে হত্যা করা কারো কাম্য নয়। এর হত্যার বিচার হওয়া উচিত। তিনি ও হত্যার বিচার দাবী করেন। সংসদ সদস্য আরো জানান,মানুষ যাতে করে গুজবে কান না দেয় ,সে জন্য তিনি লক্ষ্মীপুরসহ রায়পুর বাসীর নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে তিনি গণপিটুনিতে নিহত নারী তাসলিমা বেগম রিনু’র (৪০) আইনি সহায়তা পেতে তার ব্যক্তিগত থেকে সহায়তা প্রদান ও মৃতদেহ বাড়ি পৌছানোসহ নিহত রিনু’র রেখে যাওয়া ১১ বছরের এক ছেলে ও তুবা তাসনিম নামে চার বছরের এক মেয়ের পড়া-লেখার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নিবেন বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।