ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার পরিবর্তে চলছে রমরমা সার্টিফিকেট বাণিজ্য। হাসপতালে চিকিৎসাধীন আহত রুগীদের অর্থের বিনিময়ে এবং ক্ষমতার প্রভাবেমেডিকেল সার্টিফিকেট ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র রুগীরা। এ ছাড়া হাপসপাতালে ভর্তিকৃত একই আহত রুগীকে একবার গ্রিভিয়াস ধরন ও আরেকবার সিম্পল ধারন উল্লেখ করে এক ব্যক্তির নামে দুই দফায় দুইবার মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানেরও অভিযোগ রয়েছে।
রবিবার এক ভুক্তভোগী রুগী উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামের নিরাঞ্জন মন্ডলের ছেলে গুরুতর আহত রুগী আশুতোষ মন্ডল (২৫) জানান, “গত ২৯ মে বিকেলে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার পর আমার ইনজুরি অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রথমে গ্রিভিয়াস ধরন উল্লেখ করে একটি মেডিকের সার্টিফিকেট প্রদান করেন। সেমতে চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা হয়। কিন্তু হাসপতালে ২১ দিন ভর্তি থাকার পর রহস্যজনক কারণে গত ২০ জুন একই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমার ইনজুরি সিম্পল ধরন উল্লেখ করে প্রতিপক্ষের মাধ্যমে আরেকটি মেডিকেল সার্টিফিকেট বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করেন। ফলে আমার মামলার আসামিরা খুব সহজে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় প্রভাব দেখিয়ে চলেছে এবং আমাকে দেখে নেবে বলে বার বার হুমকী দিচ্ছে”। ওই আহত রুগীর চাচা শিক্ষক শংকর চন্দ্র মন্ডল জানান, “ আমরা গরিব বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে টাকা দিতে পারি নাই, কিন্তু একই গ্রামের প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ সুরেশ মন্ডলের ছেলে সুশিল মন্ডল (৪৫) স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে গ্রিভিয়াস সার্টিফিকেট প্রদানের ২১ দিন পর আরেকটি সিম্পল মেডিকেল সার্টিফিকেট কোর্টে পাঠিয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে ন্যায্য বিচার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে”।
রবিবার চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবুল কালাম আজাদের সামনে একই রুগীর নামে দু’টি মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদর্শন করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “ মাথায় গুরুতর জখম রুগী আশুতোষ মন্ডল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমি গ্রিভিয়াস সার্টিফিকেট প্রদান করি সত্য। পরবর্তিতে ওই রুগীর শারীরীক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার ফলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতালে রেফার্ড করি। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতালের একজন চিকিৎসক আমাকে ফোন করে সিম্পল সার্টিফিকেট দিতে বলেছে বিধায় আমি একই রুগীর নামে দ্বিতীয় দফায় সিম্পল মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়েছি”। এ সময় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কর্মচারীরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ প্রতিবেদককে জানায়, “ আসলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বেশ কিছুদিন হাসপাতালে এ্যাবনরম্যাল অবস্থায় থেকে কর্তব্য পালন করে চলেছেন। তাই টাকা ছাড়া উনি আর কিছুই বুঝে না”। আর ওই ক্ষতিগ্রস্থ আহত রুগী আশুতোষ মন্ডলের পক্ষের স্থানীয় এক মাতুব্বর উপজেলা বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের ইউসুপ মোল্যার ছেলে মো. জাহিদ মোল্যা জানায়, “ মূলতঃ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আহত রুগীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রথম দফায় ১০ হাজার টাকা নিয়ে গ্রিভিয়াস সার্টিফিকেট দেন। কিন্তু ২১ দিন পর প্রতিপক্ষের কাছ থেকে উল্টো আরও ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে একই রুগীর নামে আরেকটি সিম্পল মেডিকের সার্টিফিকেট ইস্যু করে কোর্টে পাঠায়। ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূল শাস্তি হওয়া দরকার বলেও তিনি দাবী তোলেন”।