মাত্র কয়েক বছর না যেতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। তীব্র ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানিতেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাকিতে জ্বালানি আনার অনুরোধ করেও সায় মিলছে না সরবরাহের।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওনা ৩৭ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা এবং গ্যাস বিক্রিতে পেট্রোবাংলার পাওনা তিন হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বেসরকারি খাতের রেন্টাল ও আইপিপির পাওনা ১৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ছয় হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা, ভারতের আদানী পাবে চার হাজার ১৪০ কোটি টাকা, সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ দেনা এক হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা ৯ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বেগ পেতে হচ্ছে। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিজেদের অক্ষমতার কথাও জানালেন তারা।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় দেশে চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, তখন লোডশেডিং ছিল এক হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দেশের গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কোনো কোনো গ্রামীণ এলাকায় দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশ ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির সংকট ও সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না থাকায় চাহিদা অনুযাযী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।
এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতির বিকাশ ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। অপরদিকে চলমান এ সংকট শিগগিরই কাটিয়ে ওঠবে বলে আশাবাদী বিদ্যুৎ খাতের সরকার সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা।