পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এখন ডেঙ্গুর আঁতুর ঘর। উপজেলা জুড়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হলেও ডেঙ্গুর বংশ বিস্তারে গোটা হাসপাতাল যেন ডেঙ্গুর আবাসস্থল বানিয়ে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ইনডোর থেকে আউটডোর সর্বত্রই ময়লার স্তুপ। ড্রেন থেকে শুরু করে বাথরুমে তিন চার ইঞ্চি পরিমান ময়লা,দূর্গন্ধযুক্ত পানি জমে থাকায় মশা,মাছি ভো ভো করছে। হাসপাতালের বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম থাকলেও তা স্তুপ করে রাখা হচ্ছে বিক্রির জন্য। রোগীরা নাক চেপে বাথরুমে গেলেও এ ময়লা পরিস্কারে কোন উদ্যোগ নেই।
গত বুধবার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে র্যালি শেষে হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এ দূরাবস্থা দেখে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান ও পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,কলাপাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে হাসপাতালের বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার জন্য চুল্লি করে দেয়া হলেও সেই চুল্লিটিই যেন ঢেকে দিয়েছে ক্লিনিকাল বর্জ্য।ে এ চিত্র বাহিরের। আর ভিতরের চিত্র আরও ভয়াবহ। হাসপাতালের পুরুষ,মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের বাথরুমে যেন কয়েক ইঞ্চি পানি জমে আছে। তাতে ভন ভন করছে মশা ও মাছি। শ্যাওলা ধরা বাথরুমের কোনে স্তুপ করে রাখা ময়লা। দূর্গন্ধে রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ করলেই তাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে পরিচ্ছন্ন কর্মী ও নার্সরা এ অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের।
কলাপাড়া হাসপাতাল কম্পাউন্ডে বুধবার ডেঙ্গু নিধনে পৌরসভার পক্ষ থেকে ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম দেখতে এসে বিস্ময় প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপস্থিত শতশত মানুষ। গোটা হাসপাতালের পয়ঃনিস্কাশনের ড্রেন,বাথরুম ঠিক কবে পরিস্কার করা হয়েছে তা কেউ বলতে পারেনি। হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকলেও হাসপাতালের ভিতর ও বাহিরে ময়লার স্তুপ জমা করে রাখা হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেয়া সিপিপি’র কর্মী শহীদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতালই যদি হয় ডেঙ্গুর আঁতুর ঘর তাহলে মানুষ কোথায় যাবে।
হাসপাতালের এ অব্যবস্থাপনা থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার। তিঁনি বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে ক্লিনিকাল বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার জন্য চুল্লি করে দেয়া হলেও তাতে ময়লা না পুড়ে কেন স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।
হাসপাতালের এ অব্যবস্থাপনাকে জনবল সংকটের অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. জে এইচ খান লেলীন। তিঁনি বলেন, হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারছেন না। তারাও কাজ করছেন। তবে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য পুড়িয়ে না ফেলে কেন স্তুপ করে রাখা হচ্ছে সে বিষয়ে কোন জবাব দেননি
কলাপাড়া উপজেলা ব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কার্যক্রম ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি র্যালি, আলোচনাসভা করা হলেও কলাপাড়া হাসপাতালের এ দূরাবস্থা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান। তিঁনি হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের এ ময়লা আবর্জনা দ্রুত পরিস্কার করার নির্দেশ প্রদান করেন।