দাবিকৃত চাদাঁ না পেয়ে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে আহত করার আট মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোনারগাঁ উপজেলার মাহবুবুর রহমান (৩২) নামে এক যুবক গত শুক্রবার সকালে ঢাকার একটি হাসপতালে মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলাটি হত্যা মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। মাহবুবুর রহমানের দাফনের পরদিন গতকাল শনিবার সকালে এ মামলার প্রধান আসামি ইসহাকের নেতৃত্বে পুনরায় মাহবুবের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ৪ জনকে পিটিয়ে আহত করে। ফলে নিহতের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাহবুব হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার।
উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের লেদামদী গ্রামের বাসিন্দা ও নিহত মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানান, চাকরির পাশাপাশি তার স্বামী স্থানীয়ভাবে জমি জমার ব্যবসা করতেন। গত ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার স্বামীর কাছে দাবিকৃত চাদাঁ না পেয়ে পাশ্ববর্তী টেমদী গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, আমির হোসেন, মোমেন মিয়া, কবির হোসেন, রবিন মিয়া, আবু হানিফ, ও আল আমিনসহ ১০/১২ জনের একদল সন্ত্রাসীরা বাহিনী রামদা, টেটা ও রড দিয়ে তার স্বামী মাহবুবুর রহমানকে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে দু’পা ভেঙ্গে মারাত্বকভাবে জখম করে পালিয়ে যায়।
পরে তার স্বামীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতালে দীর্ঘ আট মাস চিকিৎসা পর গত শুক্রবার সকালে ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিসিইউতে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে লাশের দাফন করা হয়।
তিনি আরো জানান, মাহবুবের দাফনের পর আসামিরা একত্র হয়ে প্রধান আসামি ইসহাকের নেতৃত্বে ফজলু, জাকির, হারুন, লুৎফর, বেলু, মুজিবুর, আনোয়ার হোসেন, শফিকুল, মাসুম ও কবিরসহ ৪০/৫০জনের একটি দল মাহবুবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করে। এ সময় হায়দার আলী, মামুন মিয়া, হোসনে আরা ও মতিয়া বেগমকে পিটিয়ে আহত করে। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত মাহবুব হত্যকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই তাহসিন বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তারের অভিযোগ, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ে তিন মাসের মাথায় ডিসেম্বর মাসে সন্ত্রাসীদের দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় আমার স্বামীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে দু’পা ভেঙ্গে দেয়। বিয়ের ১১ মাসে আমার স্বামী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারায় আমার পরিবার পুরো আতংকের মধ্যে রয়েছি। আসামি ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম শরীফুল ইসলাম জানান, আহত মাহবুবুর রহমান নিহত হওয়ার কারণে চাদাঁবাজী ও মারধরের মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হবে।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিহত মাহবুব হত্যাকান্ডের মামলাটি ডিবি তদন্ত করেছে। পুনরায় তাদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযোগ গ্রহন করা হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।