ভায়াগ্রা কী? কখন ব্যবহার করতে হয় ভায়াগ্রা? কাদের জন্য ভায়াগ্রা ব্যবহার ক্ষতিকর, আর কাদের জন্য নয়? কীভাবে ব্যবহার করা উচিৎ ভায়াগ্রা? এমন প্রশ্নগুলোর উত্তর কেউ কেউ গোপনে শুনতে চায়। কেননা, লজ্জাজনক মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। অথচ মিথ্যা ঘোষণায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আনা প্রায় ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা মূল্যের ‘ভায়াগ্রা’র দুটি বিশাল চালান ধরা পড়েছে। ওষুধের কাঁচামাল ও ফুড ফ্লেভার ঘোষণা দিয়ে আলাদাভাবে ২ হাজার ৭০০ কেজি পাউডার আমদানি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমদানি করা ২ হাজার ৫০০ কেজি পাউডারের চালানটি রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। এতে ভায়াগ্রার উপাদান পাওয়া গেছে। ওষুধের কাঁচামাল ঘোষণা দিয়ে ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা এবং ফুড ফ্লেভারের কথা বলে ১৭০ কোটি টাকার ভায়াগ্রার কাঁচামাল আমদানি হয়। বেনাপোল কাস্টমসের হাতে বিশাল চালান আটকের পর কর প্রশাসনে হইচই শুরু হয়েছে। দেশের এমন যখন পরস্থিতি, তখন ভায়াগ্রাকে এখন সাধারণত আমরা পুরুষদের যৌনাঙ্গ উত্থানের জন্য ব্যবহৃত বলে জানি। কিন্তু প্রথমে এটি অন্য রোগে ব্যবহার করা হত। যখন প্রথম ভায়াগ্রার ব্যবহার চালু হয়, তখন এটিকে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহার করা হত। কিন্তু হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভালো ফল পাওয়া যায়নি। পরিবর্তে দেখা গেল, পুরুষদের যৌনাঙ্গ উত্থাপনে এটি ভালো কাজ দিচ্ছে। তবে ভায়াগ্রা ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। পাশাপাশি ভায়াগ্রা রয়েছে কিছু নিষেধাজ্ঞাও। যখন হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভায়াগ্রার ব্যবহার কাজে দিল না, তখন গবেষকেরা এটির ব্যবহার নিয়ে ফের গবেষণা শুরু করেন। আসলে ভায়াগ্রা একটি ওষুধের রাসায়নিক নাম। গবেষণায় দেখা গেল, যৌন সংক্রান্ত সমস্যায় এটি ভালো কাজ দিচ্ছে। পুরুষাঙ্গে রক্ত চলাচল বাড়ানোর পাশাপাশি পুরুষাঙ্গের কোষের শিথিলতার সময়সীমা বাড়াৎনোর কাজ করে এই ভায়াগ্রা। এই ভায়াগ্রা ব্যবহার করে প্রচুর মানুষ উপকার পেয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের যৌনজীবনে আরও উদ্দীপনা এনে দিয়েছে।
ভায়াগ্রা সাধারণত যৌন সঙ্গমে অক্ষম পুরুষদের জন্যই ব্যবহৃত। অনেকেই যৌন জীবন সম্পর্কে আলোচনা করতে চান না। তাঁদের উদ্দেশ্যে জানানো হচ্ছে যে, আপনাদের যৌন জীবনের সময়সীমা বাড়াৎতে ভায়াগ্রার ব্যবহার খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। যৌন মিলনের ১ ঘণ্টা আগে ব্যবহার করা উচিৎ ভায়াগ্রা। তবে, ভায়াগ্রা ব্যবহারের কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। সব পুরুষ ভায়াগ্রা ব্যবহার করতে পারবেন না। যাঁদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, কিংবা কম রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের পক্ষে ভায়াগ্রা ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে। শুধু তাই নয়, ভায়াগ্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও অনেক মতবিরোধ রয়েছে। শোনা গিয়েছে, ভায়াগ্রা ব্যবহারের ফলে চোখের নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার উপর আবার মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা এ পণ্যে সরকারের শুল্কও পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু কর প্রশাসনের খবর পেয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সিএন্ডএফ এজেন্ট গা ঢাকা দিয়েছে। এখন বেনাপোল কাস্টমসের হাতে আটক চালান ছাড় করাতে প্রভাবশালীদের কাজে লাগাচ্ছে চক্রটি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শক্ত অবস্থানের কারণে ভায়াগ্রার ওই চালান এখনও গোডাউন থেকে খালাস করা সম্ভব হয়নি। একদিনেই ২ হাজার ৫০০ কেজি রাসায়নিক পাউডার আটকের পর তাতে ‘ভায়াগ্রার উপাদান’ আছে মর্মে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। এটি নিশ্চিত হতে সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে রাসায়নিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়।
দুর্নীতি আর অন্যায়ের রাজত্ব তৈরির চেষ্টায় এতটা অন্ধ হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ যে, সায়েন্স ল্যাব বা বিসিএসআইআর ছাড়া সবকটি দফতরের রাসায়নিক পরীক্ষায় আটককৃত পাউডারে ভায়াগ্রার উপাদান আছে বলে প্রমাণ মিললেও সায়েন্স ল্যাবের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ পরীক্ষা ও রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কাস্টমস বিভাগ। এমনকি ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট পক্ষপাতমূলক করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি। বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী ২৭ আগস্ট এনবিআরের চেয়ারম্যান বরাবর এক চিঠিতে এ অনুরোধ করেন। এতে অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ ও সব ল্যাবের পরীক্ষার ফল জানিয়ে সায়েন্স ল্যাবের জড়িত কর্মকর্তাদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। যতদূর জানতে পেরেছি- ২১ মে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ২ হাজার ৫০০ কেজি পাউডার ভায়াগ্রার চালান খালাসের চেষ্টা করা হয়। গোপন সূত্রের খবরে বিষয়টি বেনাপোল কাস্টমসের নজরে আসে। ওই চালান খালাসের কয়েক মিনিট আগেই কাস্টম হাউসের আইআরএম টিম তা আটক করে। সাদা পাউডারের আড়ালে ভায়াগ্রার ওই বিশাল চালানটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আইবি ট্রেডার্স থেকে আমদানি করে ঢাকার মিটফোর্ডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের বেনাপোল স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস। বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ বা এসএসজি পাউডার ঘোষণা দিয়ে ওই চালানটি ভারত থেকে আমদানি করে। ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ এই চালানে যে পরিমাণ পাউডার ছিল, বন্দরে তার মূল্য দেখানো হয় ১২ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এই চালান বাবদ সরকারকে ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ট্যাক্সও দেয়। যদিও বলা হচ্ছে যে, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে এতে কী আছে, তা নিরূপণের জন্য আমদানিকৃত পাউডারের উপাদান পরীক্ষা করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েট, সায়েন্স ল্যাব, কাস্টমসের নিজস্ব ল্যাব ও ড্রাগ প্রশাসনের ল্যাবে সাদা সোডাজাতীয় সেম্পল পাঠায়। আমদানিকৃত ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেটের’ রাসায়নিক পরীক্ষার পর ২৯ মে, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, ২৮ জুলাই কুয়েট কর্তৃপক্ষ, ৬ জুলাই ড্রাগ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ, ১৫ জুলাই বুয়েট কর্তৃপক্ষ ও ৯ জুলাই সায়েন্স ল্যাব কর্তৃপক্ষ সেম্পল পরীক্ষা করে। এর পরপরই এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে। এ পর্যায়ে কুয়েট, বেনাপোল কাস্টম ল্যাব ও ড্রাগ প্রশাসনের ল্যাব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যে নমুনা তারা পরীক্ষা করেছে তাতে ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ বা ভায়াগ্রার উপাদান রয়েছে। অর্থাৎ বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ বলে যে বড় চালানটি দেশে আনে, তা মূলত ভায়াগ্রার চালান। অন্যদিকে বুয়েটের ল্যাব টেস্টে ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’-এর ভেতর আর কী উপাদান আছে, তা শনাক্ত করতে পারেনি মর্মে রিপোর্ট দেয়।
তবে আমি মনে করি এখখানে কোন বড় ধরনের দুর্নীরি চেষ্টা এখনও অব্যহত রয়েছে। একেতো দেশে সর্বনাশ ডেকে এনেছে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় অবিরত দেশকে দেশের মানুষকে খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়া অপরাধী ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে তাদেরকে বেকায়দায় ফেলে লোভি দুর্নীতিবাজ আমলারা রাতারাতি আঙ্গুলফুলে কলাগাছ হতে করে যাচ্ছে ছলাকলা। যে কারণে সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্ট হয়েছে বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজের ঘোষণা মোতাবেক তাদের পক্ষে ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ বলেই। তবে আমি মনে করি, যেহেতু এক পক্ষ বলছে- আমরা নিজেদের ল্যাবে পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হয়েছি, এটি ভায়াগ্রার চালান।’ সেহেতু এটাই সত্য কথা। এই সত্যও হাত ধরে বলতেই হচ্ছে যে, ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবে পরীক্ষা করে ভায়াগ্রার উপাদান পওয়া গেছে। আড়াই হাজার কেজি ভায়াগ্রা দেশের ভেতর ঢুকলে কারা লাভবান বা কারা ক্ষতির শিকার হতে পারেন- এ প্রশ্নের উত্তর একটাই- ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ উপাদানই ভায়াগ্রা। এটি মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। তাছাড়া একথা সত্য- যে পরিমাণ ভায়াগ্রার উপাদান আটক করা হয়েছে, তা বাজারে ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট ফরমেটে বিক্রি হয়। যে চালানটি (২ হাজার ৫০০ কেজি) আটক করা হয়েছে, তা দিয়ে ১০০ মিলিগ্রামের ২ কোটি ৫০ লাখ ভায়াগ্রা টেবলেট তৈরি সম্ভব। দেশে-বিদেশে খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায়, ১০০ মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেটের মূল্য ১০ ডলার। সে অনুযায়ী চালানটির বাজারমূল্য ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে- সরকারি অন্য সংস্থার ল্যাব টেস্টে আটক চালানের পরীক্ষায় ভায়াগ্রার উপাদান পেলেও বিসিএসআইআর’র সায়েন্স ল্যাব রিপোর্টটি প্রভাবিত ও পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ আর কোনো ল্যাবেই পণ্যটি ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ হিসেবে শনাক্ত হয়নি। বিসিএসআইআর যে পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট দিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার সত্যতাও মিলেছে। আর একটি বিশেষ পত্রে বলা হয়েছে- ‘বর্তমান আমদানি নীতি আদেশের শর্তানুযায়ী প্রায় সব রকমের খাদ্যদ্রব্য বিসিআইআর কর্তৃক পরীক্ষিত হতে হবে। একটি আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে এ দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার খাদ্যদ্রব্য ও রাসায়নকি দ্রব্য আমদানি করা হয়। এসব ক্ষেত্রে বিসিএসআইআর’র রিপোর্টের ওপর জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তসহ শত শত কোটি টাকার রাজস্ব নির্ভর করে। গোপন সংবাদের ভিত্ততে জানা যায়, বিসিএসআইআর’র ওই রিপোর্ট আমদানিকারক চক্র কর্তৃক প্রভাবিত ও পক্ষপাতদুষ্ট। এ ধরনের অপকর্মে জড়িতরা বিসিএসআইআর’র মতো প্রতিষ্ঠানের সুনাম চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে; দেশ ও জাতিকে করেছে কলঙ্কিত। তবে বৃহত্তর ভায়াগ্রার চালানের রাসায়নিক রিপোর্ট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যাওয়ার এ বিষয়টিতে সরকারেরই একটা অংশ সরাাসরি জড়িত বলে আমার মনে হচ্ছে। একই সাথে এই রিপোর্ট বিসিএসআইআর’র সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আটককৃত পণ্য খালাসের আগে সংবাদ না পাওয়া গেলে বিসিএসআইআর’র এ ধরনের রিপোর্টের কারণে ২ হাজার ৫০০ কেজি ভায়াগ্রার কাঁচামাল খালাস হয়ে দেশের ভেতর ঢুকে যেত। আর তাতে করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে করে ফেলতো চরম শারিরীক অসুস্থ। এই বিষয়ে কারো কোন নজর নেই। কথা নেই এই বিষয়েও। সবার দৃষ্টি টাকার দিকে। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, প্রতি বছর এমন হাজার হাজার কোটি টাকার ভায়াগ্রা আসে। সবার হাওয়া পাওয়া মিটিয়ে অতিতের সকল চালান পৌছেছে ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু এবার চাওয়া পাাওয়া না মিলে যাওয়ায় এসেছে খবর পত্রিকার পাতায়। বলা হচ্ছে রকম রকম কথা।
তবে আমার অবাক লাগে, বিসিএসআইআর ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ নাম কোথা থেকে পেল! আমরা আশঙ্কা করছি, ভায়াগ্রাও ইয়াবা হয়ে উঠতে পারে। একটা দেশবিরোধী অপরাধী চক্র এর সঙ্গে জড়িত। নানাভাবে চাপ ও প্রভাব খাটিয়ে খালাসের চেষ্টা করছে। জনস্বাস্থ্য ও তরুণসমাজ বিনষ্টকারী এ জঘন্য পণ্য যে কোনো মূল্যে আটকে রাখাই শুধু নয়; ধ্বংস করাটা জরুরী। একই সাথে পরবর্তীতে যেন কোনভাবেই ভায়াগ্রা বাংলাদেশে আসতে না পারে, সেই দিক চিন্তা করে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে সবাইকে। আসুন সবাই সচেন হই, সতর্ক থাকি সবসময় সকল অন্যায় রুখে দিতে...