বাংলাদেশের রাাজনীতিতে কিছু ছাত্রনেতা, কিছু ছত্রভঙ্গ নেতা উন্মাদের মত অবিরত অপরিকল্পিত রাজনীতি করছেন। যাদের কারণে নির্মম মাশুল দিতে হচ্ছে ছাত-যুব-জনতাকে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থেকে, ছাত্রলীগ থেকে, শ্রমিক লীগ থেকে এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে-ছাত্র ইউনিয়ন কয়েক দশকে কতজন নেতা দলছুট হয়ে আলাদা দল করেছেন এবং নীতি বিসর্জন দিয়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন তার একটা তালিকা আমি দীর্ঘদিন যাবৎ তৈরি করেছি। এই তালিকায়অবশ্য আমি নেই। যদিও আমি নতুনধারার রাজনীতির প্রবর্তন করেছি, যদিও আলাদাভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি, কিন্তু তাই বলে আমি মনে করি যাদের কথা বলছি, তাদের মত ওই দুটি দলের একটিতে থেকেও আমি পরিচিত হইনি। যেভাবে পরচিত হয়েছেন, অর্থ-বিত্তশালী হয়েছেন অথবা প্রভাব তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ থেকে ড. কামাল, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অথবা কমিউনিস্ট থেকে নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রমুখ।
আমি মোমিন মেহেদী যে আদর্শকে সামনে রেখে রাজনীতি করেছি, সেই আদর্শ থেকে সেই রাজনৈতিক বলয়ের অধিকাংশ মানুষ যখন সরে গেছে, তখনই পদত্যাগ করেছি। ২ বছর পদত্যাগ করে রাজনীতি কে দূরে থেকেছি। ভেবেছি, ছাত্র-যুব-জনতাকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি, তারপর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে রেডর্যালী ও বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছি। ২৭ বছর বয়সে স্বাধীনতা-স্বাধীকারের পক্ষের রাজনৈতিকধারা নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির পথচলার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলতে থাকি; আজ যে ধারায় যুক্ত হয়েছে সাড়ে ৭ লক্ষ নেতাকর্মী-সমর্থক।
এখন বলবো বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে কিংবা তার আদর্শের অনুসারী হয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন, তাদের কথা; যারা পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ। যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের কেউ ‘অভিমানে’ দল ছেড়েছেন। কেউবা হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় পদ। এরপর গঠন করেছেন নিজের আলাদা দল। কেউ আবার যোগ দিয়েছেন অন্য কোনো দলে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাজনীতির মাঠে আলাদা করে তেমন কোনো বিকল্প দাঁড় করাতে পারেননি। বরং তারা এখনও ‘ছোট’ দলের ‘বড়’ নেতা হয়েই আছেন। ‘অভিমানী’ দলছুট নেতারা বঙ্গবন্ধুকেই এখনও আদর্শ মানেন। তবে সময়ের ফেরে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তারাই ‘সবচেয়ে বেশি আওয়ামীবিরোধী’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে তারাই গড়ে তোলেন নির্বাচনী জোট- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মকান্ড নেই, এ জোট যেন ‘কাগজে-কলমে’ই আছে!
সর্বশেষ ২০১৭ সাল থেকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পোস্টার সাটিয়ে জনগনের সাথে প্রতারণার হাত ধরে এগিয়ে আসেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী। হয়েছিলেন দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য। পরবর্তীতে অভিমানে আওয়ামী লীগ থেকে চলে গেছেন অনেক দূরে। গড়ে তুলেছেন নিজের রাজনৈতিক দল- গণফোরাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যসহ বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে গঠন করেন সরকারবিরোধী নির্বাচনী জোট- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই জোটের শীর্ষনেতা হিসেবে নির্বাচনে নেতৃত্ব দেন। ড. কামাল হোসেন এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বিরোধী প্ল্যাটফর্মের প্রধান নেতা।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন ড. কামাল। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বের সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধে। ১৯৯২ সালের ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে বাদ পড়েন ড. কামাল। তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। এরই জের ধরে তিনি গঠন করেন ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ গণতান্ত্রিক ফোরাম। ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট গণতান্ত্রিক ফোরাম থেকে ‘তান্ত্রিক’ শব্দাংশ ফেলে দিয়ে গণফোরাম নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং এদিন সকালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেন তার পদত্যাগের চিঠি। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুকেই এখনও আদর্শ হিসেবে রেখেছেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ২৪ আগস্ট আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম। সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু কারও একক পিতা নন, তিনি জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু কোনো একক দলের নয়, তিনি সবার। এ দেশে এখন বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে তার আদর্শের উল্টো কাজ হচ্ছে। তিনি যে আদর্শ আমাদের মধ্যে রেখে গেছেন তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পরবর্তীতে একই রাস্তায় হাটেন শেখ শহীদুল ইসলাম। ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি, জাতীয় ছাত্রলীগের প্রধান, জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার বিএলএফ’র মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন। মাদারীপুর-৩ আসন হতে তিনি ২ বার জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সাল হতে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ে, গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব। জেপি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক। তবে তাঁর মতে, বর্তমানে আদর্শের রাজনীতি যেমন আছে তেমনি আবার ভোটের রাজনীতিও আছে। স্বাভাবিকভাবে আদর্শের রাজনীতির যে প্রক্রিয়া সেটা বাংলাদেশে অনেকটাই অনুপস্থিত। এটা শুধু যে আওয়ামী লীগের জন্য তা নয় সবার জন্যই। সেজন্য আওয়ামী লীগও ভোটের রাজনীতির দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। ভোটের রাজনীতির কারণে কখনও কখনও তারা এমন কারও সঙ্গে সমঝোতা করছে, যা তাদের আদর্শের সঙ্গে যায় না। যেমন হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমঝোতা। এটা তাদের আদর্শের সঙ্গে যায় না। কিন্তু ভোটের রাজনীতির জন্য করতে হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করার জন্য যারা দায়ী, তাদের মধ্যে অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাজাকার-শিবির-জামায়াত কর্মীদের পৃষ্টপোষক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তিনি। পরে দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান শেষে ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আবারও সক্রিয় হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইলের বাসাইল-সখীপুর আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন কাদের সিদ্দিকী। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। তখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি। পরবর্তীতে মতবিরোধের কারণে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচন কমিশনে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করার আবেদন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন কাদের সিদ্দিকী। উপনির্বাচনে কাদের সিদ্দিকী গামছা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপর থেকে তিনি নিজের গড়া দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। নির্বাচনের পরে আবার জোট থেকে বেরিয়ে যায়। জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও ড. কামালের সঙ্গে এখনও ‘ভালোবাসার’ সম্পর্ক আগের মতোই আছে বলে মনে করেন কাদের সিদ্দিকী। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ২৬ আগস্ট আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের ভালোবাসা থেকে প্রত্যাহার করিনি। আজকের এ আলোচনাই জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আলাদা হওয়া প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভেবেছিলাম ঐক্যফ্রন্টে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে দেখলাম বিএনপির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে সরিয়ে তারেক রহমানকে ক্ষমতায় আনতে আমি কোনোদিন রাজনীতি করিনি। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই একজন নেতা। কিন্তু তারেক রহমান নয়। অন্যদিকে সৎ-মানুষ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত অধ্যাপক আবু সাইয়িদ আছেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যোগ দেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে। পরে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর কাছে পরাজিত হন। নির্বাচনের পরেও গণফোরামের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন আবু সাইয়িদ। যোগ দিচ্ছেন নানান অনুষ্ঠানে। অথচ তিনিই ১৯৯৬ সাল থেকে পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন আবু সাইয়িদ। ওয়ান-ইলেভেনের পর দলে সংস্কারপন্থী হিসেবে আখ্যা পাওয়া এই নেতা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে আবু সাইয়িদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। কিন্তু সেবারও নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর কাছে হেরে যান। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হয়েছিলেন অধ্যাপক সাইয়িদ। তার বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন দুর্নীতি উচ্ছেদ, ক্ষেতে খামারে উৎপাদন বৃদ্ধি আর জন্ম নিয়ন্ত্রণের। এক নম্বরে ছিল দুর্নীতি উচ্ছেদ। বঙ্গবন্ধুর আমলে প্রায় ৩৩ জন এমপিকে দুর্নীতি ও অসদাচরণের কারণে দল ও এমপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু আজকে দেশে দুর্নীতির মহাউৎসব চলছে। সেই ক্ষেত্রে যদি সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধান করা যায়, দেখা যাবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিই দুর্নীতিতে আক্রান্ত। রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। দেশে আইনের শাসন নেই। বরং এখন শাসন করার জন্য আইন তৈরি করা হচ্ছে। ধনী-গরিবের বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। এগুলো তো বঙ্গবন্ধু চাননি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন গণতন্ত্র। কিন্তু আজ কোথায় গণতন্ত্র? বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের যোজন যোজন পার্থক্য। একই পথে হেটেছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। একমাত্র তিনিই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন সকল বাঁধা ভেঙ্গে। ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের কঠিন সময়ের পর আওয়ামী লীগের সর্বপ্রথম যে জয় আসে তা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের হাত ধরে। ১৯৮৯ সালে ডাকসুর ভিপি পদে তার বিজয় ছিল ’৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো জয়। সেই জয়ের মাধ্যমে তার নেতৃত্বে ’৭৫-এর পর প্রথম বঙ্গবন্ধুর ছবি স্থান পায় ডাকসু ভবনে। এর ঠিক ৩০ বছর পরে সুলতান মনসুর এমপি নির্বাচিত হলেন বঙ্গবন্ধুর দলের প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগের এক সময়ের এই সাংগঠনিক সম্পাদক লড়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে। তবে নির্বাচিত হয়েই ছুটে গিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে। সুলতান মনসুর শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির জনক। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা। তাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা এটা সর্বসম্মত। জাতির পিতা হিসেবে তিনি মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। কাজেই তার আদর্শ থেকে দূরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আরেকজন কালপিট বাংলাদেশকে ধ্বংসের জন্য নির্মম লাাশের খেলায় মেতে আছে বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন মন্ত্রী-এমপিরা। তিনি এক পার্টির এক নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি। এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এই আসন থেকে পরপর দুবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। সেসময় ভোটে হারলেও কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে আসেন মান্না। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির সময়ও দলের ওই পদেই ছিলেন তিনি। তাকে ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলব’ বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা। ‘বিতর্কিত ভূমিকা পালনের’ অভিযোগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। পরে গড়ে তোলেন নাগরিক ঐক্য। মান্না ১৯৭২ সালে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন তিনি। ডাকসু থেকে তার নামও মুছে ফেলে ছাত্রলীগের নেতারা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলেও যেতে হয় তাকে। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন মাহমুদুর রহমান মান্না। বর্তমানে তিনি ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির নেতা হিসেবে সক্রিয় আছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়; আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী, জহির উদ্দিন স্বপন, শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, চিত্রনায়ক সোহেল রানা সহ শতাধিক রাজনীতিক। তাদের রাজনীতিকে ‘না’ বলে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি