বছরখানেক আগে জোরেশোরে মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর পরও মাদকের বিস্তার কমেনি বরং বেড়েছে। যুবসমাজের মধ্যে মাদকের বিস্তার দাবানলের মতো ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। মাদকাসক্তির সঙ্গে সন্ত্রাস ও অন্যান্য অপরাধ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও মাদক কারবারে জড়িত। মাদকের চোরাচালানের রশি কার হাতে? এটা বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের অজানা থাকার কথা নয়। তাহলে দেশের অভ্যন্তরে মদের চোরাচালান কিভাবে চলে? মূল কথা হলো মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের ওপর, তারা এই ‘অতি লাভজনক ব্যবসা’ থেকে লাভবান হচ্ছে বলেই মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যখন পুলিশই মাদকের কারবার করে, নেপথ্যে থাকে রাজনৈতিক শক্তিও তখন মাদকের বিস্তার রোধ করা সহজ ও সম্ভব নয়। এজন্য মাদক নির্মূলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মাদক জীবন ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। শান্তির পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সমাজে অনাচার ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। মাদক থেকে মুক্তি পেতে গোড়া থেকে সংস্কার শুরু করতে হবে। দেশে বেশির ভাগ মাদকদ্রব্য আসে সীমান্তপথে। তাই সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব মাদক কারবারিকে ধরতে পারে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তা হচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের, তারা যদি নির্মোহ থেকে; শুধু চুনোপুঁটি নয়, রাঘব বোয়ালদের ধরতে পারে, তবে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সুস্থ চিন্তার মানুষ কৌতূহল থেকে মাদকে জড়ায় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। এজন্য তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সৃজনশীল কর্মকা- বাড়াতে হবে।
প্রত্যেকের ছেলে বা মেয়ে কোথায় যায়? সারা দিন কী করে? কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে? সন্তান সারাক্ষণ মোবাইলে কী করে? মাঝে মাঝে কেন সে হতাশ হয়ে পড়ে? সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে? অল্পতেই কেন রেগে যায়? এসব ভালো লক্ষণ নয়। যে বা যিনি মাদকাসক্ত, তার আচরণ একটু খেয়াল করলেই কিন্তু বোঝা যায়। ভালো স্কুলে ভর্তি করানো হলো; আর অমনি সন্তান আদর্শ মানুষ হয়ে উঠল; ব্যাপারটা একেবারেই তা নয়। মূল্যবোধ, নৈতিকতা, ভালো-মন্দ শিক্ষাটা আসে পরিবার থেকে। কয়েক বছর আগে ঐশীর ঘটনাটি আমাদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। মাদকাসক্ত ঐশী মা-বাবাকে হত্যা করে আতঙ্কিত করেছিল গোটা দেশকে। ঐশীকা-ে বিবেক বিধ্বস্ত হয়েছিল আমাদের। মাদকাসক্তির কুফল কতটা ভয়াবহ তা ওই ঘটনা থেকেই উপলব্ধি করতে হবে সকলকে।