তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং এর পরিবেশদূষণের হার অনেক কম হওয়ায় ট্রেনভ্রমণ সবসময়ই জনপ্রিয়। তবে সম্প্রতি যাত্রীবাহী ট্রেনের ভাড়ার ক্ষেত্রে যে রেয়াতি ব্যবস্থা (ভাড়ার ছাড়) ছিল, তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই সিদ্ধান্ত আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর করা হবে। এতে দূরের গন্তব্যে ট্রেনের ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এটি ঠিক যে বাংলাদেশ রেলওয়েকে যদি লাভজনক না করা যায়, তাহলে আবারও এর অগ্রগতি থমকে যাবে। আবারও এই খাতটিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু কেবল যাত্রীদের ওপর বোঝা বাড়িয়ে রেলওয়েকে লাভবান করা যাবে কি? প্রায়ই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ইঞ্জিন, কোচের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বলা হয়, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মেরামতের অভাব রয়েছে। রেললাইনে পাথর কমে যাওয়া, একেবারেই না থাকা, মাটি দেবে যাওয়া, স্লিপার থেকে প্যান্ডেল ক্লিপ চুরি হয়ে যাওয়া, স্লিপার ভেঙে যাওয়া বা না থাকা, ফিশপ্লেট, নাট-বল্টু খুলে নেওয়াসহ আরো অনেক কারণেই ইঞ্জিন বা বগি লাইনচ্যুত হয় বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেল সেতুগুলো এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে সেগুলোর ওপর দিয়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। তার পরও ঘটে দুর্ঘটনা। আছে অনেক রকম দুর্নীতির অভিযোগ। রেলওয়ের অনেক ভূমি রয়েছে। এসব ভূমির লিজ নিয়ে চলে বাণিজ্য। অভিযোগ আছে, লিজ না দিয়েও সমঝোতায় অন্যান্যের ভূমি ব্যবহার করতে দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করা হয়। রেলওয়ের নিজস্ব অনেক কারখানা রয়েছে। অভিযোগ আছে, সেগুলো বন্ধ রেখে আমদানির তালিকা বাড়ানো হয় কমিশন বাণিজ্যের সুবিধার্থে। আমরা আশা করি, গণপরিবহন হিসেবে ট্রেনকে এগিয়ে নেওয়ার এবং বাংলাদেশ রেলওয়েকে নতুনভাবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। রেলওয়েকে অবশ্যই লাভজনক করতে হবে। কিন্তু তা কেবল যাত্রীর কাঁধে বোঝা চাপিয়ে নয়, বরং সার্বিক ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে রেল খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা আশা করি, ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করা হবে। যেহেতু রেল সরকারের সেবামূলক খাত, সেহেতু এখানে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। সরকার এ বিষয়টিতে সুদৃষ্টি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।