ঢাকা শহরে বায়ুদূষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। রাজধানীর বায়ুদূষণের একটি প্রধান কারণ আশপাশে থাকা অজ¯্র ইটভাটা এবং যানবাহনের জ¦ালানি তেল। আইনানুযায়ী জনবসতির কাছাকাছি ইটভাটা থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু সেই আইন মানছেন না অনেকেই। ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলে। সরকারি কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন কাজে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বা নির্মাণকাজের কারণে ঢাকার বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বাড়ছে। এ ছাড়া ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ ও হাজারীবাগে শিল্প-কারখানা অবস্থানের কারণে আশঙ্কাজনক হারে বায়ুদূষণ হচ্ছে।
গত বছর ১৯৭ দিন রাজধানীবাসী দূষিত বাতাসে ডুবেছিল। আগের বছরগুলোতে রাজধানীর বাতাস বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১২০ থেকে ১৬০ দিন দূষিত থাকত। অর্থাৎ ঢাকার বায়ুদূষণ সময়ের বিবেচনায়ও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
একটি চলমান গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ১৬৫ দিন রাজধানীর বায়ু অস্বাস্থ্যকর থেকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর ছিল। ২০১৫ সালে তা বেড়ে ১৭৩ দিন, ২০১৬ সালে ১২৯ দিন, ২০১৭ সালে ১৮৫ দিন ও ২০১৮ সালে ১৯৭ দিন ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে প্রতিদিন ঢাকার বায়ুর মান পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ডাক্তারদের মতে, বায়ু দূষণের ফলে, অ্যাজমা, সর্দিকাশি, হাপানি, ফুসফুসের রোগ, স্ট্রোক, হৃদরোগসহ ইত্যাদি কঠিন রোগে ভুগছে মানুষ। জরিপ অনুযায়ী ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যুও কারণ এই বায়ু দূষণ।
জানা যায়, বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের বেশি মৃত্যু হয় তার মধ্যে বায়ু দূষণ রয়েছে পঞ্চম স্থানে। বাংলাদেশে মৃত্যুর কারণ গুলোর তালিকায় শুরুর ১০টির মধ্যে ৫টি প্রত্যক্ষভাবে বায়ু দূষণ জড়িত । এ দেশে ফুসফুসের ক্যান্সারে ১৩%, শ্বাসতন্ত্রের প্রাদাহে ৭%, ফুসফুসের র্দীঘমেয়াদী কিছু রোগে ৭%,ইশেমিক হৃদরোগে ৬%, এবং স্টোক থেকে মারা যায় ৫% মানুষ। এদেশের ৭০ লাখ মানুষ শ্বাসকষ্টের রোগী তার মধ্যে অর্ধেকই শিশু। প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আর বায়ু দূষনের ফলে শিশু মৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশে বায়ু ,পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ ভাগ। শুধু বায়ু দূষণে ক্ষতি হয় ২০ হাজার কোটি টাকার। এসব দূষণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিশুরা। বিশ্বব্যাংক জানায় শহরে বাতাসের দূষণ যদি ২০% কমানো সম্ভাব হয় তাহলে প্রতি বছরে বাঁচবে ১২০০ থেকে ৩৫০০টি প্রাণ। এবং ৮০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, যে কারণে এত মানুষের অকাল মৃত্যু, সেই বায়ুদূষণের প্রতিকারে বা প্রতিরোধে সরকার বা প্রশাসনের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো নয়। আমাদের দেশের পরিবেশ রক্ষায় আইন ও নীতিমালা আছে কিন্তু তা মানা হচ্ছে না বা বাস্তবায়ন চোখে পড়ার মতো নয়। আইন এবং ফাইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাজনরা তাদের কাজ হাসিল করে চলছে। তা থামানোর মতো যেন কেউ নেই আমাদের দেশে। বর্তমানে যেভাবে বায়ু দূষিত হচ্ছে তাতে আমাদের সবারই বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হবে। তাই সরকার এবং প্রশাসনের উচিত চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কঠিন পদক্ষেপ বায়ুদূষণের আইন বাস্তবায়ন করা।