ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে ফের উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে অভিভাবকসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট মহলে। প্রায় ১০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে। এতে নানা অনিয়মের কারণে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সম্মান ও শিক্ষার মান ক্ষুণœ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ও শিক্ষার মান ধরে রাখতে ঢাকার সবুজবাগ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ফওজিয়া রেজওয়ানকে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ নিয়োগ স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনের ওপর রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। রুলে ফওজিয়া রেজওয়ানকে কোন ক্ষমতাবলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। তবে নিয়োগের ওপর কোনো অন্তবর্তীকালীন স্থগিতাদেশ না থাকায় অধ্যক্ষ হিসেবে তার কাজে যোগদানে বাধা নেই বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল দীর্ঘদিন ধরেই অভিভাবকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। কিন্তু ভালো রেজাল্ট ও জনপ্রিয়তাকে পুজি করে টাকার বিনিময়ে ভর্তি, শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে ভরপুর হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষাদানের মতো মহৎ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিয়ে এরকম খবর ও পরিস্থিতি লজ্জাজনক, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নামকরা স্কুলগুলোতে প্রাইভেট টিউটর ও কোচিংয়ের পেছনে অর্থ ব্যয়ের কল্যাণে শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করে থাকে। এসব স্কুলের শিক্ষকদের কৌশল হচ্ছে তারা স্কুলে পড়াবেন না। কিন্তু নিজের কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করার মতলবে অভিভাবকদের চাপে রাখা। আর পান থেকে চুন খসলেই স্কুলের ডাইরিতে মন্তব্য আর অভিভাবকদের ডেকে অপমান অপদস্থ করা। এমনই এক ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে সরিয়ে দেয়া হয়। নাজনীন ফেরদৌসের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ভর্তি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগও ছিলো। এগুলো আমাদের অসুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিকরণের ফল।
এই সেই স্কুল, যেখানে পরিমল নামের শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বিদ্যালয়ের সম্মানের কথা চিন্তা করে! আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা ব্যবসা নির্ভর ও পণ্যময় হয়ে গেছে তা পরিমলের ঘটনায় স্পষ্টই বোঝা গেছে। ভারপ্রাপ্তের ভারমুক্ত করতে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্ভব হয়নি। ক্ষমতা, ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে দেশের কতিপয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। নানা পর্যায়ে অনিয়ম, রুল, রিট, বিধি নিষেধ ও আইনের ফাঁদে একজন সুযোগ্য অধ্যক্ষ নিয়োগ সম্ভব হয় না, ভিকারুননিসা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। রাজধানীসহ দেশব্যাপী খ্যাতনামা স্কুলগুলো ভালো রেজাল্ট করে বলে সেগুলোর প্রশাসন, গভর্নিং কমিটি ও শিক্ষকম-লী জবাবদিহির মনোভাবের পরিবর্তে খবরদারীর অভিযোগ নেমে নেয়া যায় না।