প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে একই কমিটি নিয়ে চলছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। বহু আগেই শেষ হয়েছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। গত কয়েক বছর ধরে শেখ হাসিনা কর্তৃক নতুন কমিটি দেওয়ার জোর গুঞ্জন শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটির কোনো ঘোষনা দেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরকালে প্রতি বছরই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে জোর গুঞ্জন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি নিয়ে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে জননেত্রী নেত্রী শেখ হাসিনা কৃর্তক নতুন কমিটির ঘোষনা না আসায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ আগমন উপলক্ষে সরগরম হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। দাবী উঠেছে নুতন কমিটির। দাবী উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের। একদিকে যেমন সিদ্দিক হঠাও আন্দোলনে উত্তাল হয়ে আছে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন ষ্টেটে ঢুকে পড়া অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দলের ভিতরে বাইরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর প্রতি জোর দাবী তৃনমুল নেতাকর্মীদের। আর এ দাবীতে প্রতিদিনই সভা সমাবেশে জোরদার হচ্ছে আন্দোলন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এখন নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে কমিটি নিয়ে বিভক্তি এখন চরম পর্য্যায়ে। এবারের বিভক্তি অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় তীব্র। বিভক্ত দুটো গ্রুপের মধ্যে একটির নেতৃত্বে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন উপদেষ্টা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। বিভক্তি এত চরম আকার ধারণ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলন পর্যন্ত ডেকেছিলেন ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে ডাকা এই কর্মী সম্মেলন গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি উত্থাপন করেন। সেই সাথে তারা আহবান জানান, প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনায় ড. সিদ্দিকুর রহমান যেন না যান এবং সভাপতিত্ব না করেন। তিনি সভাপতিত্ব করতে গেলে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য ড. সিদ্দিকুর রহমানকেই দায়ী থাকতে হবে দাবি করা হয়। এ ছাড়াও ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অশোভন ভাষায় স্লোগানও দেয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ড. সিদ্দিকুর রহমান রয়েছেন ৮ বছর। যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহী গ্রুপের দাবি এবার সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেয়া হোক। বিদ্রোহী গ্রুপের একজন নেতা দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাদের বৈঠক হয়েছে, তিনি বলেছেন তার গণসংবর্ধনায় যেন কোন গন্ডোগোল না হয়, তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেবেন। অন্যদিকে সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষের গ্রুপ বলছেন, আমরা জানি না নেত্রী কমিটি দেবেন কি না। কমিটি দেয়া না পর্যন্ত ড. সিদ্দিকুর রহমানই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তার নেতৃত্বেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে এবং তিনিই সেই সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক আগমনের পূর্বের যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দিয়েছিলো। সেই সময় ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বোধীন আওয়ামী লীগ একটি স্বল্পকালীন অফিসও নিয়েছিলো জ্যাকসন হাইটসে। সেই সময়ও দুই গ্রুপের উত্তেজনায় মারামারির ঘটনা ঘটেছিলো। এই ঘটনায় বিদ্রোহী গ্রুপের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিলো। পরে অবশ্য সেই মামলা তুলে নেয়া হয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা সভায় তিনি আসার সাথে সাথেই ’নো মোর সিদ্দিক’, ’নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগানে পুরো অডিটোরিয়ামে অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেই স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরম বিরক্ত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ধমকে সেই স্লোগান বন্ধ হয়। প্রধানমন্ত্রী ধমক দিয়ে স্লোগান বন্ধ করেছিলেন কিন্তু কোন কমিটি দেননি।
এবারো প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চেয়ার ভাগাভাগি নিয়ে মারামারির ঘটনা শেষ পর্যন্ত পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। এসব কিছুর পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবার নতুন কমিটি দেবেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে বিদ্রোহী গ্রুপের কয়েকজন নেতা বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং তারা ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবার নতুন কমিটি দেবেন।
অন্যদিকে আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, কমিটি দেয়া নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। তিনি ইচ্ছে করলে কমিটি দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন। যদি নেত্রী তার শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েই দেন তাহলে এই নুতন কমিটিতে কারা অর্ন্তভুক্ত কে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন নেতৃত্বে এ নিয়ে জল্পনা কল্পনারও কোন শেষ নেই। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে সম্ভাব্য যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন- যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারন সম্পাদক শামীম চৌধুরী, মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি ড. খন্দকার মনসুর, নিউজার্সীর ড. নুরন নবী, পেনসালভেনিয়ার ড. জিয়া উদ্দীন,, ফ্লোরিডা আওয়ামী লীগ নেতা ফোবানার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক, আটলান্টার ডা. মোহাম্মদ আলী মানিক, ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, ডা. মাসুদুল হাসান প্রমুখ।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্যা সহ সভাপতি শিব্বীর আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী এনাম, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম বাদশা, আবদুল হাসিব মামুন, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা আইরীন পারভীন, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দন দত্ত, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহ বখতিয়ার, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, বর্তমান কার্যকরি কমিটির সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা প্রমুখ। সবাই বিভিন্ন ভাবে নিজ নজি কানেকশানে দেশে ও যুক্তরাষ্ট্রে দেনদরবার করে চলেছেন বলেই জানা যায়।
আগামি ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৪তম অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে প্রতিবারের মত এবারেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে পরিবর্তন চাইছে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তবে এবারও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি হবে কিনা এ ব্যাপারে কেউ কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি হবে কি হবে না তা নির্ভর করছে জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং সজিব ওয়াজেদ জয়ের সিদ্ধান্তের উপর।