ক্লাব, পাঠাগার, বিভিন্ন সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বা একাডেমিগুলো গড়ার উদ্দেশ্যই হলো শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, বয়স্কদের নিয়ে খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনমূলক কর্মকা- পরিচালনা করা। একটা সময় রাজধানীসহ দেশের নামী-দামী ক্লাবগুলোর পরিচিত ছিলো ফুটবলার গড়ার কারখানা হিসেবে। অথচ ভাবতেই লজ্জা লাগে, আমাদের প্রাণের ক্লাবে এখন অবৈধ, অন্যায় ও অনৈতিক কাজ চলছে। ক্লাব পরিচালনাকারীরা খেলাধুলাকে বাদ দিয়ে জুয়া, নারী, মদ ও ক্যাসিনোতে ব্যস্ত রয়েছে।
সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে একের পর এক বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। ক্যাসিনোর অস্তিত্ব যেন বাংলাদেশি মানুষের জন্য চমকে ওঠার মতো কাহিনী। এ ব্যবসার রহস্য উদঘাটন ও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া ব্যক্তিদের নামও একের পর এক বেরিয়ে আসছে। গত আট/দশ বছর আগেও যারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচশ-এক হাজার টাকা ধার নিয়ে সংসার চালাতেন। শূন্য থেকে কয়েক বছরেই ৩০টি বাড়ি, আর হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে সম্প্রতি ধরা খেলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার আলোচিত দুই ভাই, এনামুল হক এনাম ওরফে এনা ও তার ভাই রূপন। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ চার ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার তারা। ক্লাব থেকে পাওয়া টাকা সূত্রাপুরের বানিয়া নগরের নিজ বাড়িতে রাখার সিন্ধুক বানিয়েছেন। বিপুল পরিমাণ টাকা রাখার জায়গা না থাকায় তারা স্বর্ণালঙ্কার কিনতেন। র্যাব তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। এসব অস্ত্র দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাতেন দুই ভাই। গ্রেপ্তারকৃত চাঞ্চল্যকর ক্যাসিনো ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার তথ্যের ভিত্তিতেই এনামুল হক এনা ও রূপনের আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। এছাড়াও কেরানীগঞ্জে প্রায় ১০০ বিঘা জমিসহ এখন তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। সূত্রাপুরে এনামুলের ছয়তলা বাসার দোতলা ও পাঁচতলায় তিনটি টাকার ভোল্ট ছাড়াও ইংলিশ রোডে টাকা রাখার জন্য আরও পাঁচটি ভোল্ট ভাড়া নেন বলে জানা গেছে।
পশ্চিমা ধাঁচের অবৈধ ক্যাসিনোগুলো এতোদিন প্রশাসনের প্রশ্রয়ে প্রকাশ্যেই চালিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ক্লাবগুলোতে অনেকটাই জোরপূর্বক ক্যাসিনো বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশ প্রশাসন। ক্লাবগুলোর প্রকৃত সংগঠকরা ছিলো নিরুপায়। যেখানে অনুদানের টাকায় চলতো ক্লাব, সেখানে ক্লাবগুলোতে ভিক্ষা পরিমাণ অর্থ দিয়েই ক্যাসিনো চালিয়ে লুটেপুটে খেয়েছে রাজনৈতিক নেতা। না পোষালেও বলার মতো সাহস ছিলো না ক্লাব কর্তৃপক্ষের। এতে ধ্বংস ও কলঙ্কিত করা হয়েছে ক্রীড়াঙ্গন।
আমাদের একটাই কথা, ক্লাবগুলোতে যারা কলঙ্কের ছাপ লাগিয়েছে। তারা যত বড় নেতা, প্রশাসনের ব্যক্তি কিংবা ক্লাব কর্মকর্তা হোক, ক্রীড়াঙ্গনের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে।