বাংলাদেশে ইতোপূর্বে কোন শিল্পদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের চিন্তা করা খুব সহজ ছিলো না। দেশি অথবা বিদেশি নতুন উদ্যোক্তাদের এখানে ওখানে ঘুষ, কমিশন, চাঁদাবাজি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা প্রতিবন্ধক ছিলো ব্যবসা শুরুর। কোম্পানির অনুমোদন, বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস, ভূমি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, এলসি খোলাসহ এসব প্রক্রিয়ায় ছিলো জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতাসহ চরম ভোগান্তি। আবার কতিপয় অসৎ ও ভেজাল কারবারীরা এতো সহজে ব্যবসা করছে যে, তাদের কোম্পানির নিবন্ধন, লাইসেন্স, ভ্যাট, ট্যাক্স, সুনির্দিষ্ট অফিস ইত্যাদি কোনো কিছুরই দরকার হয়নি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ সরকারের দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক সংস্কার হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ বড় ধরনের উন্নতি করবে।’ তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে’ এবার বাংলাদেশ বেশ ভালো করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী মাসের শেষ দিকে সহজে ব্যবসা সূচক প্রকাশের আগে এবার সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশও আছে বলে আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কোনো বিদেশি ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করার আগে দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমত বিশ্বব্যাংকের এ সূচকটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ এখন এ সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। সামনের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে অবস্থানের উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এখন সূচকে মালয়েশিয়া ১৫, চীন ৪৬, ভিয়েতনাম ৬৯, শ্রীলঙ্কা ১০০ ও পাকিস্তান ১৩৬তম। আফগানিস্তানের অবস্থান ১৬৭তম।
আমরা মনে করি, সূচকে এবার কিছুটা উন্নতি হলেও, সামনে আরও ভালো করতে হলে বাংলাদেশের কাজ করার অনেক কিছু বাকি রয়েছে। মোটাদাগে ১০টি ভিত্তির ওপর বিশ্বব্যাংক ডুয়িং বিজনেসের র্যাঙ্কিং বা ক্রমতালিকা তৈরি করে। এগুলো হলো ব্যবসা শুরুর অনুমোদন, ভবন নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ সংযোগ, ভূমি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর প্রদান, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া। এসব প্রক্রিয়ায় জটিলতা, ব্যয় বেশি হওয়া ও দীর্ঘসূত্রতা একটি দেশের পিছিয়ে থাকার কারণ।
বাংলাদেশে সরকার সূচকে উন্নতি ও ব্যবসা সহজ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলো ২০১৬ থেকে। এ সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে দুই অঙ্ক, অর্থাৎ কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যদিও কতটা উন্নতি হবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশ এবার এবং আগামীর সূচকে আশাতীত উন্নতি করবে। আমরা চাই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সমন্বয় বাড়িয়ে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ (এক দরজায় সেবা) কার্যক্রম চালু করা।