বগুড়ার সার্বিক উন্নয়নে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মো: সিরাজের আহবানে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে সোচ্চার হয়েছেন বিএনপি, আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা বলেছেন, দলমত বুঝিনা, চাই বগুড়ার উন্নয়ন। এজন্য বগুড়াবাসীকে সাথে নিয়ে জনমত গড়ে তোলা হবে এবং সরকারের কাছে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে। এ ধরনের আয়োজনের জন্য সকলে এমপি সিরাজকে ধন্যবাদ জানান।
মঙ্গলবার বগুড়া প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো: সিরাজ তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, বগুড়া উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র। শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ব্যবসায়, বাণিজ্য, চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রেই অগ্রসর। কিন্তু ২০০৬ সালের পর থেকে বগুড়া শহরে দৃশ্যমান তেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। তাই বগুড়া শহরের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর, পাবলিক বিশ^দ্যিালয়, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ, যানজট নিরসনে শহরের ভিতর থেকে রেল লাইন বাইরে স্থানান্তর, বগুড়া পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সংযোগ সড়ক, করতোয়া নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, শহীদ চান্দু ষ্টেডিয়াম উন্নয়ন, চেলোপাড়া ব্রীজ প্রশস্তকরনসহ বেশকিছু উন্নয়ন প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে সদরের এরুলিয়া এলাকায় ১১০ একর ভূমির উপর ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমান বন্দর নির্মান করা হয়। বর্তমানে এখানে ৩৫০০ ফুট রানওয়ে রয়েছে। কিন্তু দরকার ৭০০০ ফুট। এ ছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার। তিনি বলেন, বগুড়ায় মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ থাকলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় নেই। তাই একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় প্রয়োজন। তিনি বলেন, বগুড়ার সাথে দেশের অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলেও রেলযোগাযোগ কঠিন। তাই সরকারের গৃহিত বগুড়া টু সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ এবং শহরের যানজট নিরসনে শহরের ভিতর থেকে রেললাইন স্থানান্তর করে বাইরে নেয়া দরকার। তিনি বলেন, ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া পৌর সভার আয়তন প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ, ওয়ার্ড সংখ্যা ২১টি এবং ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৩ হাজার। এখানে অনেক সরকারী ও বেসরকারী অফিস রয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ এ পৌরসভা বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বৃহৎ এবং সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার যোগ্য হলেও আজো সিটি কর্পোরেশন হয়নি। তাই এটিকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা দরকার। এমপি সিরাজ বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের সংযোগ সড়ক নির্মান প্রকল্প বিএনপি সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) গ্রহন করা হয়। তখন ভূমি হুকুমদখল সহ বেশকিছু কাজ করা হলেও সরকারের পালা বদলের পর তা সামনে অগ্রসর হয়নি। এ ছাড়া বিএনপি সরকার ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ করলেও তা অব্যস্থাপনার কারণে নোংরা হয়ে পড়েছে। এজন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার। এমপি সিরাজ বলেন, ২০০৩ সালে বিএনপি সরকার শহীদ চাঁন্দু ষ্টেডিয়াম নির্মান করে। এখানে আইসিসির তত্বাবধানে বেশকিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। গোটা উত্তরবঙ্গ থেকে আসেন দর্শকরা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আর এখানে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি। তাই দর্শকদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে ম্যাচ অনুষ্ঠান দরকার। এখানে শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। তিনি বলেন, শহরের চেলোপাড়া ব্রীজটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় রিকশা ছাড়া ভারী যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এটা জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা দরকার। তিনি আরো বলেন, ২০০২ সালে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নিচ তলা কাজ শেষে নামাজের জন্য চালু করা হলেও দ্বিতীয় তলা সহ অনেক কাজই বন্ধ রয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থপনা কমিটি অকার্যকর। এ কাজে সরকার সহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, শহরের রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজার অতি পুরনো। সেখানে ক্রেতা বিক্রেতারা নানা সমস্যায় পড়েন। নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না। তাই এর উন্নয়ন দরকার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাক্তার মকবুল হোসেন এসব দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এখানে উপস্থিত পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান বলেন, বগুড়ার উন্নয়নে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, বগুড়া -৪ আসনের এমপি বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন, বগুড়া বার সমিতির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম, বায়তুর রহমান সেন্টাষ্ট্রল মসজিদের সাধারন সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, দৈনিক বগুড়া সম্পাদক রেজাউল করিম বাদশা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর তালুকদার হেনা, তরুন শিল্পতি আসিফ রব্বানী সানি, বিএনপি নেতা ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, জয়নাল আবেদীন চাঁন, এম আর ইসলাম স্বাধীন, মাহবুর রহমান বকুল, ওমর ফারুক খান, কেএম খায়রুল বাশার, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, হামিদুল হক হিরু, তাহা উদ্দিন নাহিন, সহিদ উন নবী সালাম, তৌহিদুল আলম মামুন, খাদেমুল ইসলাম, এবিএম মাজেদুর রহমান জুয়েল, আবু হাসান, মোশারফ হোসেন স্বপন প্রমুখ। সংবাদ সেেম্মলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এমপি সিরাজ। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বগুড়ার উন্নয়নে সহযোগিতা কামনা করেন।