প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেদ্র মোদির সম্প্রতি বৈঠকে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক (ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ড) পানি দেবার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তবে সাতটির মধ্যে তিনটি চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের নজর কেড়েছে। ১. বাংলাদেশ থেকে উত্তরপূর্ব ভারতে এলপিজি রপ্তানি, ২. চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর ও ৩. ত্রিপুরার সাবরুম শহরের জন্য ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার।
দেখা যায়, তিনটি বিষয়েই ভারতের স্বার্থ জড়িত। বিশেষত, ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহারের বিষয়টি। ঠিক এ সময়ে এ রকম একটা চুক্তি কেন করতে হবে, তা অধিকাংশের কাছেই এক বিস্ময়। যদিও ভারত দক্ষিণ ত্রিপুরার শিলাছড়ি থেকে আমলিঘাট পর্যন্ত দুই দেশের অভিন্ন অংশের বিভিন্ন স্থানে (নো ম্যান্স ল্যান্ডে) সমঝোতা ছাড়াই প্রায় এক যুগ ধরে ৩৬টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে পানি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ও কৃষকরা এর প্রতিবাদও করেছে। নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে পাম্প হাউজগুলো সরিয়ে নিতে বারবার বলা সত্ত্বেও ভারত কর্ণপাত করছে না।
আমাদের কথা হলো, পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হলে শুষ্ক মওসুমে নদী-তীরবর্তী চট্টগ্রামের মিরসরাই, রামগড়, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, সোনাগাজী, মুহুরী সেচ প্রকল্প, ফুলগাজী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের দক্ষিণাংশ এবং নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরের কিছু অংশের বিভিন্ন সেচ প্রকল্পে পানির জোগান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কিনা ভাবতে হবে। যদি তাই হয় তাহলে, লাখ লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদের অনাবাদি হয়ে পরাসহ অকার্যকর হয়ে পড়বে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘মুহুরী’। মুহুরী সেচ প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ পানির মূল উৎস এই ফেনী নদী। যার আওতায় এ অঞ্চলের প্রায় ১৪ থেকে ১৫টি উপজেলার ৮-৯ লাখ হেক্টর জমিতে লোনামুক্ত পানির সরবরাহ করা হয়। এ নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মৎস্য খামার কার্যকর থাকার নিশ্চয়তা থাকবে কিনা দেখতে হবে।
ত্রিপুরার সাবরুমের খাবার পানি সঙ্কট মোকাবেলায় নিতান্ত মানবিক কারণে বাংলাদেশ এই চুক্তি স্বাক্ষর যদিও মেনে নেয়া হয়, কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারত কতটা সহযোগিতা করবে, আর আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট জরুরি নয় কী? সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বিষয়টি উঠেছিল। সমর্থন করে পক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৭টি দেশ। চীন যথারীতি বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ভারত ভোটদানে বিরত থেকেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাই ভারতের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা আশা না করাই যুক্তিযুক্ত।
প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের সফরের পূর্বে আমলা স্তরের যারা দর-কষাকষি করে থাকেন, তাদের মনে রাখতে হবে, কতিপয় প্রসঙ্গ যা আমাদের জীবন-মরণ সমস্যা। ফারাক্কা, তিস্তা, রোহিঙ্গা, এনআরসি বিষয়গুলো যদি বিচার মতো সমাধান না হয়, তাহলেতো প্রশ্ন উঠবেই। আমরা মনে করি মানবিক বিষয়হেতু সাবরুমের মানুষের খাবার পানির সঙ্কট যেমন পূরণ হওয়া দরকার, তেমনি আমাদের দাবিগুলোও পূরণ হতে হবে।