দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই তাপপ্রবাহ বইছে। দেশের ১২ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রির উপরে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পাশাপাশি গ্রীষ্মে বাংলাদেশে প্রচ- গরমের দিনের সংখ্যা বাড়ছে। যদি কোনো এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে থাকে, তা হলে দিনটি কষ্টের দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৬১ সালের দিকে বছরে এ রকম সাতটি দিনের মুখোমুখি হতো দেশের মানুষ। এখন সেই কষ্টের দিনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২১। এই প্রচ- গরমে অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। প্রচ- গরমে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, ঠা-া, জ¦র-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতার মতো রোগে বাড়ছে। কিন্তু সব থেকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে হিটস্ট্রোক। মূলত প্রচ- গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, তাকে হিট স্ট্রোক বলে। শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণজাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায়। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। মানুষ অজ্ঞান হয়, খিঁচুনি দেখা দেয়। পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটলে কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়, মানুষ মারাও যেতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন তাদেরও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায় এ বছর ঢাকা সহ সারা দেশে হিট স্ট্রোকে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যা অন্যান্য বছর গুলোর থেকে বেশী। আশঙ্কা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে এই মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই এখনি হতে হবে সচেতন। শুধু সচেতনতাই অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি। এমতাবস্থায় ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে, কারণে ছাড়া রোদে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কেউ অতিরিক্ত গরমে অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিতে হবে। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠা-া বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে নিয়ে যেতে হবে। রোগীর শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলে ফেলতে হবে। শরীরের তাপ কমানোর জন্য শরীরে ঠা-া পানি ঢালতে হবে, প্রয়োজনে বরফ ব্যবহার করতে হবে। আর এসব ছোট্ট পদক্ষেপই পারে আমাদের হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে।