ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দোপা নলেরটেক (জাকেরের ডাঙ্গী) নামক গ্রামে পানিতে প্লাবিত ফসলী মাঠের থোর আমন ধানী জমিতে গত এক সপ্তাহ ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনরাত বালু মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ওই গ্রামের উর্বরা আবাদি জমি ধ্বংস হওয়ায় ভুক্তভোগী কৃষকরা সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। ওই গ্রামের প্রভাবশালী মাতুব্বর আবুল কালাম চৌধুরী (৪৮) ও তাজুল ইসলাম বেপারী (৪৫) এদের ছত্রছায়ায় পার্শ্ববতী জামতলা গ্রামের রেজাউল করিমের ড্রেজার মেশিন ভাড়া করে এনে ফসলী মাঠ ধ্বংস করে রমরমা মাটি বাণিজ্য চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যপারে এক সপ্তাহ আগে ক্ষতিগ্রস্থ এক কৃষক ওই গ্রামের মৃত শেখ আবদুল গফুরের ছেলে শেখ মোতালেব (৪২) সদরপুর সহকারী কমিশনার (ভুমি) এর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করে কোনো ফল পান নাই বলে জানিয়েছেন।
তবে শুক্রবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সজল চন্দ্র শীল এ প্রতিবেদককে বলেন, “ অভিযোগ পাওয়ার পর আমি তাৎক্ষণিক ইউনিয়ন তহশিলদারকে ফসলী মাঠের ড্রেজার মেশিন বন্ধ করার জন্য পাঠিয়েছি। ওই তহশিলদার ফিরে এসে ড্রেজার মেশিন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ফসলী মাঠ কেন, যেকোনো স্থানে ড্রেজার মেশিন চালনা অবৈধ। আমি সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেব”।
আর উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, “ আমি কয়েক দফায় সরেজমিনে গিয়ে ফসলী মাঠের ওই ড্রেজার মেশিন মালিককে বন্ধ করতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু ড্রেজার মালিক বন্ধ না করলে আমি কি করবো, উর্দ্ধতনরা আমাকে তো আর ড্রেজার ভাঙার জন্য নির্দেশ দেন নাই, তাই আমি শুধু ড্রেজার বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করে চলে এসেছি”।
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ ফসলী মাঠ ঘুরে জানা যায়, উপজেলার দোপা নলেরটেক (জাকেরের ডাঙ্গী) গ্রামের পিছন দিকে নিচু এলাকায় পানিতে প্লাবিত অবস্থায় শত শত একর আধাপাকা ও থোর আমন ধানের উর্বরা মাঠ বয়েছে। বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠের মধ্যে স্থান দিয়ে রয়েছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াতের ইটের রাস্তা। ওই ধানী জমির মধ্যবর্তি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে ফসলী মাঠ বিধ্বংসী ড্রেজার মেশিন। ওই ড্রেজার মেশিন থেকে প্রায় দেড় কি.মি. পূর্ব দিকে মোটা পাইপ লাইন টেনে এনে পার্শ্ববতী দক্ষিন আলমনগর গ্রামের শেখ মনজুরুল হকের বসতভিটেয় ফেলা হচ্ছে ফসলী মাঠের উর্বরা মাটি। অতিরিক্ত দুরত্বে মাটি পাচার করতে গিয়ে দ্রুত মাটি টানতে পাইপের মাঝ পয়েন্টে আরেকটি স্যালো মেশিন চালু রাখা হয়েছে। এ সময় অবৈধ ড্রেজার মেশিন মালিক রেজাউল করিমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “ আমরা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ড্রেজার বসিয়ে মাটির ব্যবসা করছি বিধায় আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না”। একই সময় ক্ষতিগ্রস্থ ফসলী মাঠের কৃষক শেখ খায়রুল, শেখ ফারুক ও শেখ ছুরমান সহ অনেকে জানায়, “ প্লাবিত ধানী মাঠে ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাটি কেটে আমাদের ফসলী জমির বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। আমরা আইনের লোকের কাছে গিয়েও বিচার পায় নাই। আল্লাহ গ্রামের মাতুব্বদের বিচার করবো”।