কল্পনা করা যায়? একজন শিক্ষককে এভাবে অপদস্ত, অসম্মান, অমর্যাদা! আহা! সে সময় কোথায় গেলো? স্কুল, কলেজ থেকে বিদায় অথবা একজন শিক্ষকের মৃত্যু, বদলি বা অবসরকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মর্মবেদনা, কান্না, হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা! আমরা দেখছি আজ ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে পিত্রসূলভ ভালবাসা হারিয়ে গেছে শুধুই নোংরা রাজনীতির কারণে।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যদিও ‘অভিযোগ’ বলে খবর বা হেডলাইন হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলোÑ ভিডিওর মাধ্যমে স্পষ্টতই প্রমাণ হয়েছে, অভিযোগ নয়; একজন বয়োবৃদ্ধ সম্মানিত অধ্যক্ষকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ মহোদয় যদি সাঁতার না জানতেন, তাহলে আজকে হয়তো সংবাদ মাধ্যমে অন্যভাবে হেডলাইন হতো, নিউজ হতো, দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হতো, হৈ-চৈ পড়ে যেতো এবং সরকারও এসব ছাত্রলীগ নামধারী কুলাঙ্গারদের ধরপাকড় করতে বাধ্য হতো। সাঁতার জানা থাকায় অধ্যক্ষ বেচে গেলে, সরকারও বিব্রতকর অবস্থা থেকে রক্ষা পেল। কিন্তু এদের যদি যথাযথ বিচার না হয়, তাহলে ছাত্রলীগ নামধারী এসব সন্ত্রাসীরা ভবিষ্যতে আরো বেশী অন্যায়, খুন, দুর্নীতি ও অপরাধী হওয়ার আষ্কারা পেয়ে থাকবে। বিশ্বের একমাত্র দেশ বাংলাদেশ। যেখানে পড়ালেখা করতে এসে, মারামারি শিখে, চাঁদাবাজি, খুন করা, সন্ত্রাসী হওয়া শিখে, ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎযাপন করতে পারে! দেশকে নিয়ে, আমাদের প্রজন্মকে নিয়ে এসব খবর শুনতে কারোরই ভালো লাগতে পারে না।
অধ্যক্ষের অভিযোগ, অন্যায় দাবি না মানায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা এই কাজ করেছেন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, অন্তত ১০ জন তরুণ অধ্যক্ষকে দ্রুতগতিতে পুকুরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ তাঁর হাত ধরে টানছিলেন, আবার কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছিলেন। এরপর তাঁকে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘যেখানে আমাকে ফেলেছে সেখানে পানির গভীরতা ছিল ১২ থেকে ১৫ ফুট। সাঁতার জানতাম বলে আমি বেঁচে গেছি। সাঁতার না জানলে হয়তো আজই মারা যেতাম।’
শিক্ষার্থীদের দলীয় রাজনীতির লেজুরবৃত্তির শক্তি ও সিনিয়র রাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই ছাত্ররা এ পর্যায়ে নেমে এসেছে। পূর্ব থেকে তারা যা করে আসছে, তাদের যা স্বভাব তারা তাই করেছে! এদের দ্বারা এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় কী? একজন নিরপরাধ শিক্ষকের সাথে এমন অন্যায় আচরণ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না! আমরা সরকারের কাছে আশা করবো এদের লাগাম টেনে ধরার। অপরাধীদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে এরা অপকর্মের কথা মাথায় আনতেও ভয় পায়।