নবান্ন উৎসবে বগুড়ার নন্দীগ্রামে হাট-বাজারে মাছের বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভির লক্ষনীয়। বাঙালীর এই উৎসবকে ঘিরে মাছের বাজারে বাঘা, ব্রিগেড, বোয়াল, গোজার, কাতল, সিলভারসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড়বড় মাছের দেখা মিলছে। দামটাও হাকানো হচ্ছে অনেক বেশী। তবুও নবান্নের উৎসবে বেশী দামেই মাছ কিনছেন গ্রামগঞ্জের মানুষ। প্রতিটি বাড়িতে জামাই-মেয়েকে নিয়ে মেতে উঠেছে আনন্দের নবান্ন।
সূত্র মতে, ৩ ই অগ্রহায়ণ আবহমান বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির নবান্নের দিন। কার্তিকের শেষে পুরোদমে ধান পাকা শুরু করে। অগ্রহায়ণেই সেই ধান কাটা হয়। তাকে ঘিরেই গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসব। কৃষকের শস্যভিত্তিক উৎসব নবান্ন। হৈমন্তিক নতুন ধান ঘরে তোলা শুরু হলো।
'মংগার' মাস কার্তিক বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে হেমন্তের আসল রূপ ঝিলিক দিয়ে ওঠে অগ্রহায়ণে। অগ্রহায়ণ নিয়ে আসে নবান্নের আনন্দ। পৌষ-পার্বণেও কোনো কোনো অঞ্চলে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। হেমন্তে কৃষকের শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান'। কৃষক রাশি রাশি ভাড়ে ভাড়ে সোনার ধান কেটে নিয়ে আসে ঘরে। ধান ভাঙার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙ্গিনা। নতুন চালের ভাত নানা ব্যঞ্জনে মুখে দেওয়া হবে আনন্দঘন পরিবেশে। প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হচ্ছে নতুন চালের পিঠা ও ক্ষীর-পায়েস। নবান্ন আর পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা সবাই।
তাই পহেলা অগ্রহায়ণ এলেই বাংলার বুকজুড়ে ধ্বনিত হয় 'আজ নতুন ধানে হবেরে নবান্ন সবার ঘরে ঘরে..। বাঙালি কৃষির এই মৌলিক অনুষ্ঠান কবে থেকে চালু হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে মোঘল স¤্রাট আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করার পর বাংলার ফসলি সাল চালু করেন। সে সালের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। সে সময় বাংলাদেশ ছিল সুজলা সুফলা। গোয়াল ভরা ছিল গরু আর পুকুর ভরা মাছ। আর তাই সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের কোনো অভাব ছিলনা। এই সহানুভূতির মধ্যেই হেমন্তের পাকা ধান ঘরে তোলার উৎসব 'নবান্নের' শুরু। নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে মিলাদ পড়ানো হবে। মসজিদে সিরনি দেওয়ার রেওয়াজও রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকের ঘরে হবে পূজার আয়োজন। যান্ত্রিক সভ্যতা বাঙালি সমাজকে তার লোকাচার থেকে অনেক দূর নিয়ে গেছে।
এরপরও বাঙালি জাঁতি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা অবিচল রাখতে নন্দীগ্রাম উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নবান্ন পালন করবে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে। উপজেলার তৈয়বপুর গ্রামের কৃষক মোখলেছার রহমান বলেন, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও বেশ ভালো। নতুন চালের ভাত খাওয়ার আগে বাড়িতে ক্ষীর দিয়ে মিলাদ এবং ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন রকমের তরকারির আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বড়বড় মাছের হাট ও মহিষ-গরু জবাই করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মুসলিম ধর্মের মানুষদের মাঝে নবান্নের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।