চাটমোহরে সাদা সোনা বলে খ্যাত বিনা হালে রসুন আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষীরা। দিন দিন এই পদ্ধতিতে রসুনের আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকার কৃষক গম আবাদের পাশাপাশি রসুন আবাদ করে লাভবান হচ্ছে। বিনা হালে রসুন আবাদ করে বিগত এক দশকে এ অঞ্চলের চাষীরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
চাটমোহর উপজেলার কৃষক ইতোপূর্বে গতানুগতিকভাবে ইরি-বোরো,গম,সরিষা,কলাই,মসুর ও সবজির চাষ করতো। এতে অতি বৃষ্টি,বন্যা,খরা,ঝড়,শিলাবৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ,পোকামাকড়ের আক্রমণের ঝুঁকি,সারসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে আবাদে খরচ বেড়ে যেতো। কিন্তু গত এক দশক আগে বিনা হালে রসুনের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় চাষীরা রসুন আবাদে ঝুঁকে পড়ে। চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া,ছাইকোলা,বিলচলন ও হরিপুর ইউনিয়নে বিনা হালে রসুনের আবাদ হয়ে থাকে। চাষীরা জানান,অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে আগে কৃষক কেবল ইরি-বোরো ধান আবাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। এখন সে সকল জমিতে বিনা হালে রসুনের আবাদ হচ্ছে। প্রতি বছরই রসুনের আশাতীত ফলন হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,২০০৭ সাল থেকে চাটমোহরে পুরাদমে বিনা হাল পদ্ধতিতে রসুনের আবাদ শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান রশীদ হোসাইনী জানান,আমন ধান কাঁটার পর জমি থেকে দ্রুত আগাছা পরিস্কার করে মাটি কাঁচা থাকতেই পরিমিত সার ছিটিয়ে সারিবদ্ধভাবে রসুন বীজ রোপন করে খড় বা বিচালী দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিতে হয়। ৯০ থেকে ১শ’ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে ওঠে। চলতি মৌসুমে চাটমোহরে ৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রসুন চাষী শহিদুল সরকার,আনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা জানান,বর্তমানে বিলে রসুনের বীজ বপন চলছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন রসুন চাষীরা। নারী-পুরুষ সারিবদ্ধভাবে সকাল থেকে রসুন বীজ বপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। লাইন করে, দঁড়ি টেনে। সময় খুব কম। নরম মাটি রোদে শক্ত হলে, আর হবে না। তাই মজুরদের সাথে পরিবারের সবাই মিলে এখন মাঠে নেমেছে কৃষক। চলনবিলের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল এখন এই রসুন। চলনবিলের মাঠ থেকে পানি নেমে যাচ্ছে নদীতে। জেগে উঠেছে পলি ধোয়া উর্বর ফসলী জমি। জমির আমন ধান কাঁটার পাশাপাশি চলছে খড় পরিষ্কারের কাজ। জমি চাষের প্রয়োজন নেই। জমি পরিষ্কার বা হালের দরকার নেই। কাদা মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে রসুন কোয়া। সাথে সাথেই ধানের নাড়া (খড় বিচালী) অথবা কচুরী পানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে রসুনের ক্ষেত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখন চলছে রসুন বোনা। এক সাথে ধানকাটা মাড়াই আর রসুন বপনের কারণে দেখা দিয়েছে মজুর সংকট। নারী ৩০০,পুরুষ মজুর ৫০০ টাকাতেও মিলছে না। প্রতি বছরের মতো এবারও সাফল্য আসবে বলে চাষীদের আশাবাদ।
শনিবার চাটমোহর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় ২২ থেকে ২৮ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ ৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর খাবার রসুন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ। রসুন আবাদ করতে বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। যারা জমি লীজ নিয়ে আবাদ করেন তাদেরকে বিঘা প্রতি অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। ১ বিঘা জমির রসুন বিক্রি করা যাচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদে বিঘা প্রতি লাভ থাকছে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ হাজার টাকা। কিন্তু কোনো কোন বছর বাজার এত খারাপ থাকে যে তখন উৎপাদন খরচ ও উঠে না। চাটমোহরের দোদারিয়া গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান জানান,রসুনের বাজার অস্থির থাকে। কখনো লাভ ভালই হয়। আবার লোকসানও দিতে হয় অনেক সময়। উৎপাদন খরচটা অনেক বেশি বলে ঝুঁকিটাও বেশি বলে জানান কাটেঙ্গা গ্রামের রসুন চাষী ইমরান আলী।
কৃষকদের দাবি সরকারিভাবে রসুন চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করা হলে আবাদ আরও বাড়বে। তারা রসুনের আবাদের জন্য প্রর্দশনী প্লট স্থাপণের দাবি করেন।