‘কলঙ্ক মৃত্যুর সমান’ ফেসবুকে এমনই স্ট্যাটাস দিয়ে ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনের সেবায়েত বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী (৪৪) আত্মহনের পথ বেছে নিয়েছেন বলে। সোমবার ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটে শ্রী অঙ্গনের পাঁচ তলা ভবনের পঞ্চম তলায় ওই সেবায়েতের নিজ কক্ষে। সেখান থেকে গলায় রশি বাধা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী গত সাত বছর ধরে শ্রীঅঙ্গনে রয়েছেন। তিনি ইতঃপূর্বে ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধরাণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু শ্রী অঙ্গনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অন্যায়ের ঘটনার প্রতিবাদে তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে চলমান কমিটিতে তিনি সহ সেবায়েত হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
শ্রীঅঙ্গনের নৈশ্য প্রহরী সাগর কর্মকার (৩৪) জনান, সোমবার ভোরে মন্দিরে মঙ্গল আড়তি শুরু হওয়ার পরও বন্ধু সেবক মন্দিরে উপস্থিত না হওয়ায় তিনি ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনের পঞ্চম তলার ৫০৫ নম্বর কক্ষে যান। ওই কক্ষে তিনি থাকতেন। ডাকাডাকি করার পর দরজা না খোলায় এবং কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি ওই কক্ষের জানালা দিয়ে কক্ষের ভিতরে টর্স লাইটের আলো জ¦ালিয়ে দেখতে পান সিলিং ফ্যানের সাথে গলা রশি বাধা অবস্থায় বন্ধু সেবকের দেহ ঝুলছে। পরে তিনি শ্রী অঙ্গনের কর্মকর্তাদের জানালে পুলিশ ও র্যাবে খবর দেওয়া হয়।
সকাল আটটার দিকে পুলিশ লাশটি নামিয়ে ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে ভোর ৪টা ৩২ মিনিটে বন্ধু সেবকের নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বন্ধু সেবক ‘‘জীবনের শেষ লেখা শেষ কথা” শীর্ষক স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, এ ভাবে পৃথিবী ছেড়ে যাবার কথা ছিল না। পরিস্থিতির কারণে যেতে হচ্ছে। কলঙ্ক মৃত্যুর সমান মনে করি। এর জন্য দায়ি শ্রী অঙ্গন মহানাম সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু (৪৮)। তারই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। দুই নারীকে আমার বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা হয়েছে ব্যাক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে।
দুপুরে শ্রী অঙ্গনে ওই মন্দিরে নিবাসীদের মনে শোকের পাশাপাশি প্রচন্ড ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। সকলেই বলছে, বন্ধু সেবক অত্যন্ত সৎ, নির্ভিক ও পরপোকারী লোক। তিনি কখনও অন্যায় সহ্য করতে পারেন না। পক্ষান্তরে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু লোভী প্রকৃতির লোক। তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চান। পরিচালনা কমিটির মেয়দ দুই বছর। কিন্তু বর্তমান কমিটি প্রায় তিন বছর ধরে আছে। সেবায়েতরা আরও বলেন, সাধারণ সম্পাদক তার পদ বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন জনকে অন্যায় সুযোগ সুবিধা দেন।
গত শনিবার রাতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে শ্রীঅঙ্গনের কার্যালয়ে বন্ধু সেবকের বিষয়ে সভা হয়। ওই সভায় বন্ধু সেবককে শ্রী অঙ্গন ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বন্ধু সেবক দৃঢ়তার সাথে বলেন, তার ব্যাপারে যা বলা হচ্ছে তা মিথ্যাচার। তিনি যদি শ্রী অঙ্গন ছেড়ে চলে যান তবে ময়মনসিংহ বা দোহারের জয়পাড়া যাবেন না, এমন জায়গায় চলে যাবেন যেখানে গেলে কেউ তাকে আর খুঁজে পাবে না।
বন্ধু সেবকের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজ্ঞান বন্ধু বলেন, আমি শুনেছি তিনি ফেসবুকে তাকে জড়িয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন এতে আমার বিপদ হতে পারে। তিনি বন্ধু সেবককে একজন চরিত্রহীন ব্যাক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তিনি তার নিজ কক্ষে নারীদের নিয়ে যেতেন। তিনি বলেন, যে সব সেবায়েত এ মন্দিরে রয়েছে তদের সকলকে টাকা দিয়ে বশ করেছেন বন্ধু সেবক। তাই তারা সকলে আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান চালতে গেলে কঠোর হতেই হয় এজন্য নিবাসীরা তাকে পছন্দ করে না।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এসআই বেলাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে দুপুরে থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলাদায়ের করা হয়েছে। এ মামলার বাদী হয়েছেন মহানাম সম্প্রদায়ের সভাপতি কান্তি বন্ধু ব্রহ্মচারী। আসামি করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু, সুচিত্রা মহন্ত (৩৪) ও চায়না মহন্তকে (২৬)।