চলন্ত ট্রেনে (লালমনি এক্সপ্রেস) জন্ম নেওয়া ৩ দিন বয়সী ইয়াকুকে ভাগ্যবানই বলতে হবে ,কারণ হিসাবে উল্লেখ করতেই হয়, মিডিয়ায় বদৌলতে তাকে নিয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ,ডাক্তার ,নার্স ওয়ার্ডে কর্মরত অন্যান্য সবাইকে বেশ কেয়ারফুল থাকতে হচ্ছে।
জানা গেছে ,২৪ নভেম্বর রাজমিস্ত্রির যোগানদার ছকমাল তার অন্তস্বত্তা স্ত্রী রাবেয়া (৩৪) কে নিয়ে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর ষ্টেশন থেকে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে রওয়ানা হয় নিজ বাড়ী লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জের উদ্দেশ্যে। মাঝরাত আড়াইটা তিনটার দিকে প্রসব বেদনা ওঠায় ট্রেনেই একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন রাবেয়া। ২৫ নভেম্বর ভোরে ট্রেনটি বগুড়া ষ্টেশনে পৌঁছুলে যাত্রীদের পরামর্শে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন তারা।
এরপর কিভাবে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেলে যাবেন জানতে চাইলে কেউ একজন হেল্প সেন্টার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে বগুড়ার ফায়ার সার্ভিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা মোতাবেক ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা তাদের মেডিকেল কলেজে পৌছে দেন।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরটি প্রচার হতে থাকলে চলন্ত ট্রেনে জন্ম নেওয়া শিশু ও তার মা’কে নিয়ে হাসপাতালে এক তটস্থ পরিস্থিতি তৈরী হয়। ২৬ নভেম্বর এক সজ্জন ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন রেখে ইনকিলাব প্রতিনিধির মাধ্যমে নবজাতকের জন্য নগদ ২ হাজার টাকা পাঠান। সংবাদ সংস্থা এফএনএস’র মিডিয়া কর্মিকে সংগে নিয়ে ইনকিলাব প্রতিনিধি হাসপাতালে রাবেয়ার খোঁেজ সংস্লিষ্ট ওয়ার্ডে গেলে দায়িত্ব প্রাপ্ত সিনিয়র নার্স তাপসী রাবেয়ার সাথে কথা বলতে গেলে, রাবেয়া জানান, ভাইরে সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করতে করতে আর তথ্য দিতে দিতেতো আমাদের জানই শেষ।
এরপর রাবেয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত ফাইলটা হাতে দিয়ে নবজাক ইয়াকুবের নাম নিয়ে বললেন, হায়রে হতভাগা ইয়াকুব সবাই শুধু তোর খোঁজই নিল, দেখেই গেল, ছবি তুললো কই তোর চিকিৎসার জন্য ,তোর মায়ের খাবার জন্যতো একটা টাকাও দিয়ে গেলনা।’
নার্সের কথার প্রেক্ষিতে ইয়াকুবকে ২ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলতেই সেখানে উপস্থিত সবারই চোখে মুখে হাসির ঝিলিক খেলে যায়। হাসি মুখে সিনিয়র ষ্টাফ নার্স তাপসী রাবেয়া ও তার জুনিয়র বাবলী রানী বলে, আসুন আসুন ওদের বেডের কাছে নিয়ে যাই।
এসময় ইনকিলাবের বগুড়া ব্যুরো প্রধান ২ হাজার টাকা ইয়াকুবের মায়ের হাতে তুলে দিতেই ,আশে পাশের বেডের রোগীর এ্যাডেনডেন্টরা তাদের নিজেদের খাবার দাবারের ভাগ থেকে এটা ওটা এনে দিতে থাকে।
সেখানে উপস্থিত পিডব্লিউডির এক কর্মকর্তা জহিরুল হকও ৩ হাজার টাকা তুলে দেন ইয়াকুবের মায়ের হাতে। অপ্রস্তুত ও অভিভূত হয়ে টাকাটা হাতে নিয়ে ইয়াকুবের বাবা স্ত্রী রাবেয়াকে বলতে থাকে ‘দ্যাখো কইসিলাম না ইয়াকুব আমার ভাগ্যবান ব্যাটা ?
সিনিয়র ষ্টাফ নার্স তাপসী রাবেয়া এবার ইয়াকুব সম্পর্কে তার আগের বক্তব্য পাল্টে বলেন, ইয়াকুব তুই সত্যিই ভাগ্যবানরে !
নবজাতকের নাম ইয়াকুব কেন রাখা হল জানতে চাইলে তার বাবা ছকমাল বলেন, নবীর নামে নাম রাখছি, আমার অন্য ৩ ছাওয়ালের নাম ইসলাম, ইসমাইল ও ইউসুফ।
এদিকে শেষ খবর পর্যন্ত বগুড়া শহীদ জিয়া উর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশুতি বিভাগে চিকিৎসাধিন প্রসুতি রাবেয়া সহ তার নবজাতক ইয়াকুব শুস্থ আছেন বলে জানান হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক।