প্রায় দেড় মাস আগে তোলা হয়েছে একটি টিনের ঘর। তবে এখনো বেড়া দেয়া হয়নি। নেই কোনো বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র। তাই ফাঁকা ঘরের মধ্যে গরু-ছাগলের চারণভূমি। অথচ কাগজ-কলম আর সাইনবোর্ডে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত ১৯৮২ সালে। এই চিত্র নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরব্রাক্ষèণডাঙ্গা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার।
এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, এখানে কোনো দিন ক্লাস হয়নি। কোনো শিক্ষক-কর্মচারীদেরও দেখা মেলেনি। গত ১২ জুন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের ইবতেদায়ী মাদরাসগুলো এমপিভূক্তির ঘোষণা দিলে চরব্রাক্ষèণডাঙ্গায় হঠাৎ করে মাদরাসার নামে ঘর তুলে কতিপয় ব্যক্তি ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৮২ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার সচেতনমহল।
চরব্রাক্ষèণডাঙ্গার সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম জানান, এটি নাম সর্বস্ব মাদরাসা। এর কার্যক্রম খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ। সরকার ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তির ঘোষণায় ফায়দা লুটতে এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি হঠাৎ করে একটি ঘর তুলে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। আর পাশের মসজিদের জমি ব্যবহার করে মাদরাসাটি উঠানো হয়েছে। এমপিওভুক্তির কথা বলে পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। শিক্ষকপ্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের নামে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
চরব্রাক্ষèণডাঙ্গার তাইজুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস আগে একটি টিনের ঘর তুললেও নেই কোনো বেড়া। চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকারণ নেই এখানে। কখনও ক্লাস হয়নি। অথচ ইবতেদায়ী মাদরাসায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস রয়েছে। এ বছর চরব্রাক্ষèণডাঙ্গা ইবতেদায়ী মাদরাসা থেকে ১২জন পরীক্ষার্থী লোহাগড়ার নখখালী দাখিল মাদারাসা কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এসব পরীক্ষার্থীর অনেকেই দুই থেকে তিন বছর আগে ব্রাক্ষèণডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার ব্রাক্ষèণডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদরাসা ছাত্র। ভুয়া পরীক্ষার্থীর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে দু’টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর তারা আর কেন্দ্রে যায়নি। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এই এবতেদায়ী মাদরাসার কাছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। হঠাৎ করে মাদরাসাটি দৃশ্যমান হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে মাদরাসার সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, সরকার এমপিওভুক্ত ঘোঘণার পর নতুন করে মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ক্লাস চলবে। ভুয়া পরীক্ষার্থীর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এলাকাবাসী জোর করে ১২জনের পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগই দুই-তিন বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, তারাই আবার মাদরাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কীভাবে অংশগ্রহণ করল? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী স্কুলের শিক্ষার্থীরা মান্নোয়নের জন্য মাদরাসা থেকে পরীক্ষা দিতে পারে। এ ছাড়া মাদরাসার নামে ৩৪ শতক জমি আছে এবং এর কিছু অংশ মসজিদের জন্য রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরো জানান, ঘর নির্মাণসহ অন্যান্য খরচ শিক্ষকদের টাকায় করতে হচ্ছে। এখন টাকার অভাবে ঘরটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চায়লে পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল আহাদ রেগে ওঠেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। লোহাগড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও নখখালী কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদুল করিম জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় দু’টি বিষয়ে অংশগ্রহণের পর চরব্রাক্ষèণডাঙ্গা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার ১২ শিক্ষার্থী আর পরীক্ষায় দিতে আসেনি। আর প্রথম থেকেই একজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তবে কেন তারা অনুপস্থিত ছিল, তা জানা নেই।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে ইবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভুক্তর ঘোষণা এসেছে। তবে এখনো যাচাই-বাচাই চলছে। কোনো মাদরাসাকে এখনো চুড়ান্ত করা হয়নি। যদি যোগ্যতা অনুযায়ী এমপিওভুক্তির পর্যায়ে পড়ে তবেই তাদের চুড়ান্ত করা হবে।