ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদী অধ্যুষিত পলল বাহিত জমিতে মুড়িকাঠা পেঁয়াজ আবাদের উপযুক্ত এলাকা। প্রতি বছর রবি মৌসুমে অত্র উপজেলায় প্রায় এক হাজার একশো হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়ে থাকে। অত্র উপজেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর গুটি পেঁয়াজের আকাশ চুম্বি মূল্যের কারণে কৃষরা মুড়িকাঠা পেঁয়াজ আবাদে অণিহা প্রকাশ করে চলেছেন।
শুক্রবার উপজেলা সদর হাটে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিমন গুটি পেঁয়াজ ১২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৩৩ শতাংশ জমির এক বিঘাত জমির পেঁয়াজ আবাদ করতে প্রায় ১০ মন গুটির প্রয়োজন হয়। সার, বীজ ও মজুর মিলে এক বিঘাত জমি আবাদ করতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়। এত টাকা খরচ করে পেঁয়াজ আবাদ করার পর ভরা মৌসুমে বাজার মূল্যের ধ্বস হওয়ার শঙ্কায় কৃষকরা এ বছর পেঁয়াজ আবাদে শঙ্কা প্রকাশ করে চলেছেন।
উপজেলার বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক খোকা শেখ (৫২) বলেন, “ প্রতি বছর চার হাজার টাকা মন দরে গুটি পেঁয়াজ কিনে আবাদ করার পর ভরা মৌসুমে উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করে খুব বেশী লাভবান হতে পারি নাই। আর এ বছরে ১২ হাজার টাকা দরে গুটি কিনে পেঁয়াজ আবাদ করা গরিব কৃষকদের পক্ষে অসাধ্য ব্যপার”। আরেক কৃষক বি.এস. ডাঙ্গী গ্রামের শেখ ইব্রাহিম (৫৫) বলেন, “ লাখ রাখ টাকা খরচ করে আবাদ করার পর ভরা মৌসুমে ৪/৫শ’ টাকা করে পেঁয়াজের মন হলে চাষীরা সর্ব নিঃস্ব হয়ে পরবে, তাই চলতি রবি মৌসুমে পেঁয়াজ বাদ দিয়ে অন্য ফসল আবাদ করছি”। উপজেলা সদর বাজারের গুটি পেঁয়াজ ব্যাবসায়ী শেখ জালাল উদ্দিন জানান, “ অতিরিক্ত মূল্যের কারণে এ বছর কৃষকরা আর মাঠের পর মাঠ পেঁয়াজ আবাদ করছে না। গৃহস্থ পরিবারগুলো নিজেরা খাওয়ার জন্য ১০ কেজি বা ২০ কেজি করে গুটি কিনে দু’এক শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে চলেছেন”। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর রহমান বলেন,“গুটি পেঁয়াজের আকাশ চুম্বি মূল্যের কারণে আমি বিএডিসিতে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু বিএডিসিতেও পেঁয়াজ নাই। ফলে উপজেলার কোনো কৃষকের ঘরে গুটি পেঁয়াজ মওজুদ থাকলে শুধু তারাই এ বছর পেঁয়াজ আবাদ করতে পারবেন”।
জানা যায়, প্রতি বছর চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে প্রায় ৩৮০ হেক্টর জমিতে, গাজীরটেক ইউনিয়নে ৩৬০ হেক্টর, চরহরিরাপুর ইউনিয়নে ৩২০ হেক্টর ও চরঝাউকান্দা ইউনিয়নে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে প্রায় চার হাজার কৃষক পরিবার মুড়ি কাঠা পেঁয়াজ আবাদ করে আসছিল। এ বছর উপজেলার কৃষকরা অর্থাভাবে ও লোকসানের শঙ্কায় পেঁয়াজ আবাদ করছেন না। এতে আগামী বছর উপজেলাবাসীর মসলা বীজ পেঁয়াজ সংকট দেখা দিবে বলে অনেকে ধারনা করছেন।