পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ। আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্বের বিবেচনায় আয়তনের মোট এক-দশমাংশ বিশাল এলাকা, বড় বিষয়! নানা কারণে পাহাড়ে স্থায়ীরূপ লাভ করছিলো ঘৃণা, বিদ্বেষ, রক্তক্ষরণ, উপজাতি ও বাঙালি দ্বন্দ্ব। পাহাড়ের রক্তক্ষয়ী লড়াই ও হানাহানি বন্ধসহ স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার উপজাতি সশস্ত্র সংগঠন জেএসএসের সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়েছিলো। সরকার চুক্তির পরে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ওই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে সক্ষম হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইউনেসকো শান্তি পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়। শান্তি চুক্তির ফলে যদিও সাময়িকভাবে বন্ধ হয় দীর্ঘদিন ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাত। কিন্তু সেটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গত রোববার ঢাকায় একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য শান্তি প্রতিষ্ঠা না হওয়ার জন্য সরকারকেই দোষারোপ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। যিনি স্বয়ং প্রতিমন্ত্রীর মার্যাদাসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ অবাক হওয়ার মত বিষয়, যা সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেননি সন্তু লারমার। যদি তাই হয়, তাহলে একজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার সাংবিধানিক পদের কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র না নেয়া বা না থাকাটা অতি বিস্ময়কর বলেই মনে করছি আমরা। যা অনেকটা দেশের প্রতি তার আনুগত্য বা দায়বদ্ধতা না থাকারই প্রমাণ!
আমরা দেখছি, সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ৭২টি শর্তের মধ্যে অধিকাংশ শর্ত পূরণ করা হলেও পার্বত্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলো বা উপজাতি নেতারা তাদের শর্তগুলো পূরণ করেনি আজও। প্রধান শর্ত হিসেবে সশস্ত্র পার্বত্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলো তাদের অবৈধ অস্ত্রই এখনও জমা দেয়নি। বরং তাদের বহরে ধীরে ধীরে যুক্ত হয়েছে এসএমজি, এলএমজি ও স্নাইপার রাইয়েলসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। এমন এক অবস্থায় পাহাড়ে থামেনি অভ্যন্তরীণ হানাহানিসহ শান্তির পরিবেশ। এখনও ঝরছে রক্ত।
আমরা মনে করি, সময়ের চাহিদা প্রেক্ষিতে শান্তি চুক্তির কিছু ধারা পরিবর্তন বা ‘রিভিউ’ করে হলেও দ্রুত চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হোক। এছাড়া বড় একটি সমস্যা হলো, ভূমি কমিশন কার্যকর করা।
প্রয়োজনে ভূমিসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব মেটাতে নতুন কমিশন গঠন করা হোক। শান্তিচুক্তির বেশির ভাগ শর্তাবলি বাস্তবায়ন হলেও ভূমি সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এটিকে পুঁজি করে দেশি-বিদেশি এনজিও এবং আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বহু রকম যড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা মনে করি রাষ্ট্রের প্রশাসনকে বহুপক্ষের বহুমুখী দূরভিসন্ধি উপলব্ধি করতে হবে। তাই দ্রুত ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যাতে এটিকে পুঁজি করে বাংলাদেশের এত বড় একটি অনন্য অর্জনের মুখে কালি লেপন করতে না পারে।