প্রায় ৩শ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ চিনিকল ২০১৯-২০২০ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৪টায় মিলের ৫৩তম আখ মাড়াই এর উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামলীলীগের সভাপতি আবদুল হাই।
মিলটি ২০১৮-১৯ আখ মাড়াই মৌসুমে এই চিনিকলটি প্রায় ৭৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। গতকাল মোচিক কেন কেরিয়ার প্রাঙ্গনে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন খালেদা খানম এমপি (মহিলা সংরক্ষিত), আবদুল মান্নান সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ, জাহাঙ্গীর সিদ্দীকি ঠান্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ পারভিন, মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল, আখ চাষি ইউনিয়নের সভাপতি জহুরুল ইসলাম, প্রমুখ।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল সুত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০২০ আখ মাড়াই মৌসুমে চিনিকলটি প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার ৬৮৮ মেট্রিক টন চিনি আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আর চিনি আহরনের হার ৬.২৫%। কার্যদিবস ধরা হয়েছে ১০০ দিন। এ মৌসুমে আখ রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ২শ একর জমিতে। আখ চাষী রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার।
২০১৮-১৯আখ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদন হয়েছিল ৫ হাজার ৭শ ৮৫ মেট্রিক টন। এই মৌসুমে চিনিকলটি লোকসান দিয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বর্তমানে চিনিকলের গুদামে চিনি রয়েছে ২০৬ মেট্রিক টন চিনি। এছাড়াও এই মৌসুমে চিনি আহরনের লক্ষ্য ছিল ৭.৫০%। কিন্তু অর্জিত হয়েছে ৫.৬৮%। প্রতি মেট্রিক টন চিনির মুল্য ৫৫ হাজার টাকা দরে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার চিনি রয়েছে। এছাড়াও চিনিকলের শ্রমিকরা দুই মাসের বেতন বাবদ ২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
তিনশত কোটি টাকা পুঞ্জিভূত ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিগত ২০১৮-২০১৯ মাড়াই মৌসুম শুরু করে মিলটি। ২০১৭-২০১৮ মাড়াই মৌসুমে ৩২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে মিলটির। এর আগে ২০১৬-২০১৭ লোকসান হয় ২৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ৩৫ মাড়াই মৌসুমে লোকশান হয়েছে ৩,শ ১ কোটি টাকা। বাকি ১৬ মৌসুমে লাভ হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ আখ রোপন মৌসুম ঋনী ৬১৬২ একর এবং অঋনী ৩৮ একরসহ ৬২০০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়।
মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর জানান, তিনি আরো বলেন চলতি ২০১৯-২০ আখ মাড়াই মৌসুমে লোকসনের পরিমান কমিয়ে আনতে কাজ করছেন। এছাড়াও চাষীদের ঠিক মতো এবার আখ বিক্রির টাকা পরিশোধ করা হবে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ২০৭.৯৩ একর নিজস্ব সম্পত্তির ওপর নেদারল্যান্ড পদ্ধতিতে সরকার মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি স্থাপন করে। এর মধ্যে ২০.৬২ একর জমিতে কারখানা,৩৮.২২ একর জমিতে স্টাফদের জন্য আবাসিক কলোনী, ২৩.৯৮ একর জমিতে পুকুর ও প্রায় ১০৭ একর জমিতে পরীক্ষামূলক ইক্ষু খামার ও ১৮.১২ একর জমিতে সাবজোন অফিস ও ইক্ষু কয় কেন্দ্র নিয়ে স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ কর্মদিবস আখ মাড়াই চলে। লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় পরবর্তী ১৯৬৭-৬৮ মাড়াই মৌসুম থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিনিকলটি তাদের উৎপাদন শুরু করে। ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা ছাড়াও যশোরের দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় মোচিক জোন। মিলের আটটি জোনের আওতায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে সাড়ে তিন লাখ একর। আখ ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে ৪৮টি।