চিকিৎসাক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার অনস্বীকার্য। কিন্তু এসব যন্ত্রই যদি বিকল হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসা সেবা কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়াটি যদি নিজেই ‘রোগগ্রস্ত’ হয়ে থাকে তাহলে তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ তা বলাই বাহুল্য। এমনই ঘটনা ঘটেছে চিকিৎসা সেবায় দক্ষিণাঞ্চলবাসীর একমাত্র ভরসাস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে। সেখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর মেশিন (কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার যন্ত্র) রয়েছে ১০টি। যারমধ্যে বর্তমানে নয়টিই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। অপরদিকে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ।
প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের পূর্ব দিকের নতুন দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই নিবির পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা হয়। ইউনিটটি চালুর সময় থেকেই রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, তিনটি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর ও মনিটর সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিগত দুই বছরে একে একে নয়টি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন এ ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে মাত্র একজন রোগীর। যে কারণে এখানে আসা মুমূর্ষ রোগীদের বাধ্যহয়ে চলে যেতে হয় ঢাকায়। সেক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
সরকার যখন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রতিশ্রতিবদ্ধতার কথা জানাচ্ছে, তখন বরিশাল মেডিকেলে এহেন সংকট তার বিপরীত অবস্থা প্রকাশ করে। শুধু বরিশাল মেডিকেল নয়, দেশের অনেক সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চলছে ধুঁকে ধুঁকে। এছাড়া বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা সামগ্রী কেনার নামে হরিলুটের খরব ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। এগুলো একটি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। এটি যদি ব্যহত হয় তাহলে একটি সুস্থ জাতি খুব তাড়াতাড়ি পঙ্গু জাতিতে পরিণত হতে পারে। কিন্তু এই ক্ষেত্রটিতেই অবহেলা আর দুর্নীতির ছড়াছাড়ি।
শেবাচিম হাসপাতাল প্রশাসনের দাবি, ইতোমধ্যে নতুন ভেন্টিলেটর মেশিন কেনার চিন্তার পাশাপাশি আইসিইউ চালু রেখে রোগীদের সেবা নিশ্চিতের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ’র জন্য সময়ের তাগিদে এখন যেমন ইলেকট্রিক ভেন্টিলেশন মেশিন, উন্নতমানের মনিটর (যেখানে হার্টবিট, ব্লাড প্রেসার, ফুসফুসের-লিভারের কার্যকারিতা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব) প্রয়োজন; তেমনি এজিবি মেশিন, ইলেক্ট্রোলাইট পর্যবেক্ষণ মেশিন, পোর্টেবল এক্সরে, পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর মেশিনেরও প্রয়োজনীতা রয়েছে। পাশাপাশি আইসিইউ রুম অথবা এর পাশেই ডায়ালাইসিস ফ্যাসিলিটেট রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং মেশিন, সিটি স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন থাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আমরা আশা করি, এ ব্যাপারে কালক্ষেপণ না করে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এমনিতেই আঞ্চলিক পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে রাজধানীমুখী হতে হয়। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক চাপেরও সম্মুখীন হতে হয়। এই অবস্থায় বিভাগীয় পর্যায়ের মেডিকেল কলেজগুলোর দুরবস্থা মানুষের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই ঢাকার বাইরের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সংকট নিরসনে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।