কয়েক দিনের টানা শৈত্য প্রবাহে আর হিমেল হাওয়ায় লালমনিরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। সন্ধ্যা নামার আগে আগেই এলাকার দোকানগুলো বন্ধ হতে শুরু করছে।
রবিবার (২২ডিসেম্বর) সকাল থেকে শীতের তীব্রতা আরো বেশি বাড়ছে বলে আবহাওয়া সুত্র জানিয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তিস্তা পারের শিশুবৃদ্ধ সকলেই খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
জেলার ৫টি উপজেলার নদী অধ্যুষিত ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চর অঞ্চল গুলোতে হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষ সরকারী শীতবস্ত্ররের জন্য পথ চেয়ে বসে আছে। তাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ জরুরী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শৈত্য প্রবাহের কারনে শিশুদের মধ্যে শীত জনিত রোগ দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার খেঁটে খাওয়া মানুষ গুলো কয়েক দিন থেকে কাজকর্ম না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এদিকে ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলোতে শীতজনিত রোগে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।
তিস্তাপাড়ের শাহিন ইসলাম জানান, প্রতিদিন দুপুরের পরে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে। এই শীতে কাজকর্ম করতে না পেরে ঘর বসে দিন কাটাছি।
লালমনিরহাটে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত থেকে শীতের দাপটে বিপর্যস্ত জীবন যাত্রার মান। এ জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার কয়েক হাজার শীতাত অসহায় গরিব মানুষ পৌষের হাড় কাঁপানো কনকনে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন বাজার গুলোতেও সন্ধ্যার পর পরেই দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকজনের চলাচলও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম।
হাট-বাজারের পুরাতন কাপড়ের দোকান গুলোতে নি¤œ আয়ের লোকজনের ভীর দেখা যাচ্ছে। তবে এ সকল শীত বস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় অভাবী লোকগুলো কিনতে পারছে না তাদের প্রয়োজনীয় সেসব শীতবস্ত্র। তীব্র শীতের কারনে জেলায় শীতবস্ত্র বিতরন জরুরী হয়ে পড়েছে। এভাবে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগ-ব্যাধী।
তিস্তাপাড়ের সুমন মিয়া বলেন, শীতের মাঝেও পেটের দায়ে কাজের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। কাজ না করলে খাব কী? ছেলে সন্তান না থাকায় আমাকে একাই সংসার চালাতে হয়।
চরে বসবাসকারী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানকার কয়েক হাজার মানুষ ভীষণ কষ্টে আছি। শৈত্য প্রবাহের এই গত কয়েকদিনে কেউ আমাদের কোন খবর নেয়নি। কোন প্রকার শীতবস্ত্র বা একটা কম্বলও দিচ্ছে না আমাদের। যাতে করে আমরা চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষ গুলো শীত নিবারন করতে পারি। আমরা কয়েক হাজার মানুষ কঠিন এই শীতে মানবেতর জীবন যাপন করছি।’ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়ছে হিমালয়ের পাদদেশের লালমনিরহাট জেলার মানুষ। ঠা-ার দাপটে নিদারুণ কষ্টে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চরম কষ্টে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া ও চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা অব্যাহত রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী জানান, গত কয়েক দিন ধরে শীতের প্রকোপ দেখা দেয়ায় ঠা-াজনিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। আমরা সকলকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দিচ্ছে।