সংবাদীয় শুভেচ্ছা। প্রিয় তথ্যযোদ্ধা ও প্রিয় বাংলাদেশী আপনারা জানেন- বাংলাদেশ সবসময় হুজুগকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সেই হুজুগের ধারক ও বাহক। যে কারনে নির্মম বিশ্বজিৎ-নুসরাত-আবরার সহ অসংখ্য ঘঁনার পর রাজপথে তথাকথিত পন্থায় আয়োজন করে রাজনৈতিক কর্মসূচীর। এরপর ভুলে যায় অন্ধকার আর খুনের শিকারমানুষগুলোর কথা। নতুন কোন ইস্যুত মেতে ওঠে। অথচ প্রয়োজন ছিলো আগের ইস্যুগুলোর যথাযথ বিচার ও দ্রুত সমাধান। এই ৪৯ বছরে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটেছে। যা আমরা মনে রাখতে পারিনি। বিচার হয়নি। নিরবে বের হয়ে গেছে আইনের ফোকর গলে অসংখ্য অপরাধী। এই সুযোগে গড়ে উঠেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। যার ধারাবাহিকতায়- বাবা রুনু খান জামালপুর সদরের পৌর কাউন্সিলর, ছেলে রাকিব খান জেলা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, দু’জনে মিলে পিটিয়েছিলেন এক সাংবাদিককে। সেই ঘটনায় বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সেই মামলার স্বাক্ষী আবার আরেকজন সাংবাদিক। স্বাক্ষী দিতে বিরত থাকতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কাজ না হওয়ায়, স্বাক্ষীর ওপর হামলা করে দুই পা ভেঙে দিয়ে রাগ মেটালেন ছাত্রলীগ নেতা রাকিব খান। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকার পুরাতন এসডিওর বাড়ির পেছনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত সাংবাদিক শেলু আকন্দ জামালপুরে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা ও স্থানীয় “পল্লীকণ্ঠ প্রতিদিন” পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি।
আহত সাংবাদিক শেলু আকন্দ গণমাধ্যমকে জানান- ডায়াবেটিসে থাকায় তিনি প্রতিদিন সকাল ও রাতে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শহরের বাইপাস রোডে হাঁটাহাটি করেন। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন রাতে তার দেওয়ানপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে বাইপাস রোডে হেঁটে যাওয়ার সময় এসডিওর বাড়ির পেছনে ওঁৎ পেতে থাকা পৌর কাউন্সিলর রুনু খানের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব খান, তুষার খান, স্বজন খান ও তুহিন খানসহ ৪/৫ জন তার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা লোহার পাইপ দিয়ে তার দুই পায়ে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে। লোহার পাইপ দিয়ে পেটানোর এক পর্যায়ে তিনি (শেলু আকন্দ) পরে গেলে রাকিব ও তার সহযোগীরা চলে যায়। খবর পেয়ে তার স্বজন ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই যখন অবস্থা। তখন নতুন প্রজন্মের রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক-সামাজিক কর্মী হিসেবে বলতেই পারি- দেশ-মানুষের যে কোন আন্দোলনের নেতৃত্বে বিশ্বাসযোগ্যতা বা Credibility একটি বিরাট ব্যাপার, বিশেষ করে কোন সমাজের গুনগত পরিবর্তনের আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। লিডারশীপ বা নেতৃত্বের গুণাবলী। ১) মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অনুপ্রাণিত করেছেন। ২) অনুগামীদের প্রতি ছিল তাদের অফুরন্ত ভালবাসা ও উদারতা এবং প্রচুর দরদ। ৩) পরস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সর্বদা ছিল অটুট। ৪ তাঁরা ছিলেন একে অন্যের বিশ্বাসী ও আস্থা ভাজন। ৫) পরামর্শের দরজা ছিল সর্বদা উন্মুক্ত তাদের কাছে। ৬) অন্যের স্বার্থে তারা নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করেছেন। ৭) তাদের ছিল দায়িত্ব বোধ এবং ¯্রষ্টার উপর অটল বিশ্বাস। ৮) তাঁদের ছিল খোলা মন ৯) তাঁদের ছিল দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ১০) মানুষের সমস্যা বুঝার ক্ষমতা ১১) যোগাযোগ দক্ষতা (Communication skills ) ১২) সু-দূরদর্শী ও পরিকল্পনাকারী (Farsighted and Planning ) ১৩) প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ও আমানতের খেয়ানত না করা। ১৪) জবাবদিহিতার নেতৃত্ব। ১৫) কখনও তাঁরা প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন না।
স্বপ্নপথের পথিক হতে তাদের নেতৃত্ব দেশ ও মানুষকে পথ দেখায়, দেখায় আলোর পথ-ভালোর পথ। সেই আলোর পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে ভালোবেসে সাংবাদিকবান্ধব সংগঠনগুলোর। আমার মতে সংগঠন হতে কোন বাঁধা নেই, চাঁদাবাজী করলেই যত বাঁধা-প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে হবে। তবে দেশের প্রথিতযশা এক সাংবাদিক একটি লেখায় লিখেছিলেন- অনেক সংগঠন প্রতি বছর নির্বাচন করে। এতে ভোটার কেনা বেঁচাও হয়। কোন সংগঠনতো পাঁচতারা হোটেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও করে-ওদের একটা বড় অংশই নামমাত্র বেতনে চাকরি করে।
এখন প্রশ্ন আসে সাংবাদিকরা কিভাবে বারবার নির্যাতিত হচ্ছেন? খুন হচ্ছেন? মিথ্যে মামলার শিকার হচ্ছেন?
উত্তরটা একদম যেভাবে বাবার ১০ সন্তান আলাদাহয়ে যাওয়ার পর শত্রুপক্ষ এসে একজন একজন করে কুপোকাত করেছে। হ্যাঁ, কেবল ঐক্যবদ্ধতার অভাবের কারণে নির্যাতন-নিষ্পেষন ও খুন-গুমের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকগণ। তার উপর কিছু সাংবাদিক নামক দানব আছেন, এরা বিবেকবান হওয়া স্বত্বেও বিবেকহীন কাজ করছে? সেভাবে করছে- যেভাবে একজন ছিনতাইকারী প্রথমত মানুষ, দ্বিতীয়ত মুসলমান, তৃতীয়ত বাঙালি-বাংলাদেশী, চতুর্থত কোন না কোন পরিবারের সর্বোচ্চ ভালোবাসা-সম্মানের পাত্র হওয়া স্বত্বেও ছিনতাই করে। ঠিক তেমনি করেই সাংবাদিকরা তাদের নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলী দিয়ে এগিয়ে চলছেন অন্যয়ের পথে; সংগঠনের পদ বিক্রি করছেন সন্তানের পড়ালেখার খরচ, সংসারের চাালের বস্তা আর বউ-কন্যার পোশাক ক্রয়ের জন্য। হয়তো এ কারণে ঢাকা শহরে হেন বিষয় নেই যাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের সংগঠন নেই। অনেকের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের অডিট হয় না। সংগঠন কেন্দ্রিকদের একটা অংশ নানা ব্যবসায়িক লেনদেন বা অনেক নিগোসিয়েশনের কাজও করে।জ্বালানি-বিদ্যুত খাত ব্যবসায়ীদের কনসালটেন্ট অনেক সংগঠন। তারা সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেতু বন্ধন করেন।সংগঠনের পরিচয় কাজে লাগিয়ে অনেকে গাড়ি বাড়ি জমিজমার মালিক বনে গেছেন। এরা প্রায়ই বিদেশ সফর করেন ব্যবসায়ীদের অর্থে। সাংবাদিক পরিচয় ভাঙ্গিয়ে বহুজন বহুভাবে সুবিধা নিচ্ছেন-অথচ পেশাগত কাজে তাদের দক্ষতা নামমাত্র। অনেকে দুলাইন লিখতেও জানেন না। কিন্তু সভাপতি। এরা অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যও করেন। মহাভারত কাহিনীসম সব। এই সংগঠনগুলোর আয়ের উৎস কি? প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-রাজনীতিকদের কাছ হতে চাঁদা নিয়ে সংগঠন চালায় যারা- তারা আর যাই হোক সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ধারক বাহক নয়। অর্থদাতাদের নানা সার্ভিস দিতে হয়। তাদের অনিয়ম -দুর্নীতি চাপা দিতে হয়। বীট ভিত্তিক সংগঠনগুলো সিন্ডিকেট করে দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে সক্রিয় থাকে। তারা নানা উপঢৌকনও পায়। বিদেশ সফরও ব্যবসায়ীর অর্থে। ব্যবসায়ীরাও সাংবাদিক পোষে। এদেশে সৎ সাংবাদিকতা সুদূর পরাহত হয়ে পড়ছে।
স্বার্থরক্ষা আর রাজনৈতিক কালোমানুষদের পদলেহন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তারই একটি উদাহরণ হলো- ৪৭ সাংবাদিক হত্যার শিকার। শুধু এখানেই শেষ নয়; কথায় কথায় হামলা-মামলার রাস্তায় অগ্রসর হচ্ছে। এইতো সেদিনের কথা, ৪ আগস্ট ২০১৮; ঢাকায় সায়েন্স ল্যাব মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার রাহাত করিমের ওপর লাঠিসোটা, চাপাতি নিয়ে আক্রমণ করা হয়। আক্রমণকারীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী বলে অভিযোগ উঠে। তখন তিনটি আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত বার্তায় বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা করেছে। তারা প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের দ্রুত মুক্তির পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের ওপর সহিংসতা বন্ধেরও দাবি জানান। সংগঠনগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (আইএফজে) এবং সাউথ এশিয়া মিডিয়া সলিডারিটি নেটওয়ার্ক (এসএএমএসএন)। দেশে সকল সাংবাদিক সংগঠন যখন নিরব ভূমিকায় ছিলো, তখন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এক লিখিত বার্তায় ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই)-এর হেড অব অ্যাডভোকেসি রবি আর প্রাসাদ বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে সম্প্রতি সাংবাদিকদের ওপর বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছেন। প্রকাশিত খবরে জানা যায় যে সেসব হামলার কিছু পরিচালিত হয়েছে আপনার দলের লোক এবং পুলিশের দ্বারা।”
এমন উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বাংলাদেশে সাংবাদিকদেরকে ভাবতে হবে, ভাবতে হবে বিশ্বময় অগ্রসরমান সাংবাদিকদের বর্তমানের সাথে আমাদের এগিয়ে চলার পাথেয় নিয়ে। তা না করে ‘ওই সংগঠনের সভাপতি হলে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যাাবে, চলো তাহলে ওই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচন করি, তোমরা আমাকে বিজয়ী করো, ভাগাভাগি করে খাবো’ নীতিতে এগিয়ে চলছে বর্তমান সাংবাদিক সমাজ। তার উপর আছে ছলাকলার রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিক। এরা দেশের স্বার্থ-সাংবাদিকদের স্বার্থ না ভেবে বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জামায়াত-কমিউনিস্টদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। মধ্যিখানে নির্মততা বাড়ছে, বাড়ছে বিচারহীন দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর-যুগ।
এইতো সেই দিনের কথা- বরিশালের পুরাতন বিউটি হলের সামনে ডিবি পুলিশের এক অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় সাংবাদিক সুমন হাসান। অভিযানের বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাঁকে নির্যাতন করা শুরু করে। তাঁকে বেধড়ক মারধর ও অন্ডকোষ চেপে ধরা হয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জ্ঞান ফেরার পর আবারো নির্যাতন করা হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেন। কি নির্মমতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছি, তার প্রমাণ- সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল ছবি তোলার সময় গুলি খেয়ে মারা যান। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, তাঁকে ইচ্ছে করেই গুলি করা হয়েছিল, যদিও বিষয়টি পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। শুধুএখানেই শেষ নয়; আমরা জানি- পেশাগত দায়িত্ব পালন করার ‘অপরাধে' ২০০১ সালের ২৫ জানুয়ারি ফেনীতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীর নেতৃত্বে তাঁর ব্যক্তিগত সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা টিপু সুলতানকে নির্মমভাবে পেটায়। হাত-পা গুঁড়িয়ে দেয়। এত বছর পর এখনো তাঁকে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। অবস্থা খুব একটা পাল্টায়নি, একটা সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে চরমপন্থিদের ব্যাপক উৎপাত ছিল। তাদের হামলায় মারাও গেছেন কোনো কোনো সাংবাদিক। আহত হয়েছেন অনেকে। সে ধরনের পরিস্থিতি এখন আর নেই কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর চাপ অব্যাহত আছে। এই সংবাদ দেয়া যাবে না, ওই সংবাদ লেখা যাবে না।
আমি যেহেতু গত ২৪ বছর ধরে সাংবাদিকতা-লেখালেখির সাথে জড়িত; মেহেন্দীগঞ্জে শিক্ষার্থী থাকাকালিন সময়ে ১৯৯৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাক সহ বিভিন্ন দৈনিকে লেখালেখির পাশাপাশি ১৯৯৯ সালে বরেণ্য সাংবাদিক মীর মনিরুজ্জামান-এর হাত ধরে আজকের কাগজ-এ লেখালেখির সাথে সাথে স্থানিয় দৈনিক দক্ষিণাঞ্চলে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হই; পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালিন সময়ে যুগান্তর, খবরপত্র, সমাচারসহ বিভিন্ন দৈনিকে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি; সেহেতু সেই আলোকে বলতে চাই- দু'ধরনের সাংবাদিক আছেন। এর মধ্যে যারা প্রকৃতই সাংবাদিকতা করতে চান তাঁদের ওপর সব রকমের চাপ রয়েছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রশাসনের যারা অন্যায় বা দুর্নীতির সঙ্গে য্ক্তু সবার আক্রোশের শিকার হন সাংবাদিকরা। এখন সাংবাদিক হত্যা বা শারীরিক নির্যাতনের সংখ্যা হয়তো কমেছে, কিন্তু মিথ্যা মামলা দেয়ার ঝুঁকি রয়েই গেছে৷ এছাড়া ৫৭ ধারা তো তাদের জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মোক্ষম অস্ত্র। কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিক হয়রানির ঘটনা ঘটেছে অনেকগুলো। ২০১৫ সালে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে সিনিয়র সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য মামলা তুলে নেয়া হয়। গত বছরের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৮ জন সাংবাদিক ৫৭ ধারার মামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি অনলাইন প্রেস ইউনিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের সময়ের বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক এম লোকমান হোসাঈন, নির্বাহী সম্পাদক ফুয়াদ, বার্তা সম্পাদক আল আমিন গাজী সহ কয়েকজনকে এই ৫৭ ধারার মাধ্যমে নাজেহাল ও এলাকা ছাড়া করেছিলো বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মইদুল ইসলামের আঙ্গুলি ইশারার আরেক কর্তা চীফ ম্যাজিস্ট্রেট। শুধু কি এখানেই শেষ! গত বছর ৩ জুলাই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পর যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে দিনাজপুরে এই ধারায় মামলা হয়। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবার সময় একজন বিচারক যাত্রাপথে যে সুবিধা পাচ্ছেন এবং অন্য সাধারণ মানুষ যেভাবে যাচ্ছে, সে বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন নাজমুল তাঁর স্ট্যাটাসে। তাতেই সংক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এত এত অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতি। তবু বাংলাদেশকে ভালোবেসে আলোহেসে এগিয়ে চলি রোজ। চোখের পাতায় স্বপ্ন- গণমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন হবে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তৎকালিন মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যাার-এর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট থেকে এই দাবীতে কাজ করে যাচ্ছি), সাংবাদিকদের পেনশন ভাতা প্রদান করাা হবে। সাংবাদকদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য সরকারীভাবে ‘জানালিস্ট ল’ সাপোর্ট টিম’ গঠন করা হবে। আমরা উচ্চারণ করবো- অনলাইন প্রেস ইউনিটির অঙ্গিকার-অপসাংবাদিকতা থাকবে না আর; অনলাইন প্রেস ইউনিটির সদস্যদের চাওয়া- হয় যেন নবম ওয়েজবোর্ড যথাযথ পাওয়া; সাংবাদিকদের পেনশন ভাতা দিতে হবে-নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বও নিতে হবে; সাংবাদিকদের তালিকা চাই করতে হবে-বঙ্গবন্ধুর সোনার স্বদেশ গড়তে হবে; কলম দিয়ে লড়তে থাকে সাংবাদিক-দেশের জন্য মরতে থাকে সাংবাদিক; সত্য-সঠিক তথ্য দিয়ে লড়তে হবে-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ গড়তে হবে; অনলাইন পোর্টাল-আইপি টিভিতে সরকারী অনুদান চাই- ডিজটাল বাংলাদেশ গড়তে এর কোন বিকল্প নাই; সাংবাদিকদের কথা ভেবে সংবাদশিল্প ঘোষণা দিন-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে তাদের ব্যাংককিং যোজনা দিন; বায়ান্ন থেকে একাত্তর সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিলো বেশি- এই কথাটা ভুলে গেলে কিসের বাংলাদেশী?; সারাদেশে সংবাদকর্মী ঐক্য হলে ঠিক- দুর্নীতিবাজ-জঙ্গী-দানব পাবে না পালানোর দিক; গণমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে করো- ডিজিটাল দেশ গড়তে হলে এই পথটা ধরো...
[মোমিন মেহেদী : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, অনলাইন প্রেস ইউনিটি ও প্রধান সম্পাদক, বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম]