টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামী ১০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। অনুষ্টেয় বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে ময়দানের প্রস্তুতি কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ৩দিন করে দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফা ১০-১২ জানুয়ারি ওলামা-মাশায়েক, তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেবেন। ১২ জানুয়ারি রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে তা শেষ হবে। প্রথম দফায় আসা মুসল্লিরা ১৩ জানুয়ারি সকালের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন। পরে ভারতের মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভী অনুসারী মুসল্লিরা আগামী ১৭ জানুয়ারি রোববার বাদ ফজর থেকে দ্বিতীয় দফার ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১৯ জানুয়ারি দুপুরের পূর্বে যেকোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। প্রতি দফা ইজতেমা কার্যক্রম শেষ করে জিম্মাদারগণ ময়দানের দায়িত্ব প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন।
ইজতেমাকে সামনে রেখে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, তিতাস গ্যাস, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য ৮টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইজতেমায় আগত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পক্ষ থেকে আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া ব্রীজের পশ্চিমপাশে, আমতলী মোড়, হোন্ডা কারখানাসহ ময়দানের চারপাশে ১৫টি দৃষ্টিনন্দন তোরণ তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তার লক্ষে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে ২৪টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের নিরবচ্ছিন্ন বয়ান শোনার জন্য সাধারণ মাইকের পাশাপাশি বিশেষ ছাতা মাইক স্থাপনের কাজ চলছে। লোহার পাইপ ও বাঁশ-কাঠ দিয়ে ময়দানের পশ্চিম পাশে নামাজের মিম্বর ও উত্তর-পশ্চিম কোণে বয়ান মঞ্চ তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে আসা শফিকুল ইসলাম প্রায় দুইশ’ জন ইজতেমার সাথী ভাই নিয়ে ময়দানে কাজ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেই দিক খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করে যাচ্ছি। টঙ্গীর পাশে কামার পাড়া থেকে আসা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বিদেশী মেহমানদের কামরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছি। যাতে বিদেশী মেহমানরা ইজতেমা ময়দানে এসে চলাফেরায় কোন প্রকার কষ্ট না পান সেই দিকে লক্ষ রেখে কাজ চলছে।
ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ করেছেন মুসল্লি¬রা। পুরান ঢাকা থেকে আসা একশ ষাট জনের একদল মুসল্লি¬ ময়দানে কাজ করতে দেখা গেছে। ময়দানে কাজ করতে আসা মুসল্লি মোহাম্মদ আলী (৫৫) জানান, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের খেদমতের উদ্দেশ্যেই মাঠে আশা হয়েছে । তিনি বলেন, মাঠের প্রস্তুতি কাজ করতে প্রতি বছর আসি। আরেক মুসল্লি নিজাম উদ্দিন (৪৫) জানান, আল্ল¬াহকে রাজি খুশি করার জন্য বিশ বছর যাবত ইজতেমা মাঠে কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময় দুনিয়াবী কাজে মগ্ন থাকি। আখিরাতের নেকী হাসিলের উদ্দেশ্যে ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে এসেছি। মিরপুর থেকে ২শ মুসল্লি আসছে ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে। ওই দলের একজন ছাত্র হাসিবুর রহমান বলনে, ইজতমো ময়দানে আসার উদ্দশ্যে হলো আল্লাহকে রাজি খুশি করা। আখরোত সর্ম্পকে জানা। তার সাথে আসা সবাই বলেছেন একই কথা। ৭৫ বছরের আবদুল আলী বলেন এ দুনয়িা হচ্ছে ধোকার ঘর। আমরা জীবনে মানুষকে ধোকা দিয়েছি সেই গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য ইজতমো মাঠে এসেছি ।
যোগাযোগ করা হলে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের (সাফাই) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কমিটির জিম্মাদার ফকির আতাউর রহমান জানান, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে টঙ্গীতে শুরু হতে যাচ্ছে ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা। এ উপলক্ষে চলছে প্রস্তুতিকাজ। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগের মতো ময়দানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১২জানুয়ারি দুপুরের আগে যেকোনো একসময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে প্রথমপর্বের ইজতেমা।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার মাওলানা মাহফুজুল হান্নান বলেন, ময়দানের প্রস্তুতিকাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যেই ময়দানের বাকি কাজ সম্পন্ন হবে, ইনশাআল্লাহ। আগামী ১০ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্যদিয়ে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হবে। ১২জানুয়ারি আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।