নতুন বছরে ভরা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কেমন হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আভাস না মিললেও মশাবাহিত রোগটির বিস্তার শীতকালের বৈরী ঋতুতেও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। বছরের শুরুতেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের হাসপাতালগুলোতে অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ২০১৯ সালে ২৬৬টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর প্রতিবেদনের মধ্যে ২৩৪টি ঘটনা পর্যালোচনা করে ১৪৮ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করে। বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা আরও বেশি।
গত বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমলে নিয়ে এবছর এখন থেকেই ডেঙ্গু রোধে কাজ শুরু করতে হবে। এডিস মশার বিস্তার রোধে সক্রিয়ভাবে এখন থেকে কাজ করতে না পারলে এবছরও অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে একসঙ্গে হাসপাতালে যাবে। তখন সবার দিকে ভালো করে নজর দেওয়া যাবে না। আর নজর দিতে না পারলে আরও প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। ডিসেম্বরের জরিপে রাজধানীতে ‘খুব কম’ এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার কথা জানা গেলেও তাতে নিরাপদ বা আত্মতৃপ্তি বোধ করার কারণ নেই। চলতি শীত মৌসুমে গত কয়েকদিন যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেছে। এই বৃষ্টিপাত কিউলেক্স ও এডিসের জন্য উপযোগী হয়েছে। এর ফলে বছরের প্রথমেই যদি ডেঙ্গুর পরিমাণ বেড়ে যায় তা হলে সিজনের সময় কী হবে সেটা ভাববার বিষয়।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস ঘরের ভেতরে ও আশপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে পানিতে জন্মায়। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে থাকে বলে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই মশার বিস্তার বেশি হয়। সেকারণে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেশি হয় বলে এসময়কে ডেঙ্গু জ্বরের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জুন থেকেই শুরু হয় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ঋতু। গত বছর মে মাস থেকেই ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়, জুন ও জুলাইয়ে ক্রমশ বেড়েছে অগাস্টে তা প্রায় মহামারী আকারে রূপ নেয়।
সঠিক পরিকল্পনা ধরে এগোলে সামনের মৌসুমে ডেঙ্গু মোকাবেলা করা সম্ভব। মশা নিয়ন্ত্রণে এতদিন শুধু সচেতনতা বাড়াতে কাজ করা হয়েছে। তবে এবার সেখানে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। কোথাও মশার উৎপত্তিস্থল পাওয়া গেলে বাড়ির মালিক-বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে। গতবছর নাগরিকদের অসচেতনতায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছিল। এবার এ ধরনের পরিবেশ পাওয়া গেলে জরিমানার পাশপাশি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে হবে। মশা একসময় শহুরে সমস্যা থাকলেও বর্তমানে এটি সারাদেশের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর মূলত রাজধানী থেকে সারাদেশে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এডিসের উৎস বন্ধ করা না গেলে ছড়িয়ে পড়ার পর তৎপর হয়ে সফলতা পাওয়া যায় না তা আমরা দেখেছি। সামনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনী ব্যস্ততায় ডেঙ্গুর কথা ভুলে গেলে চলবে না। জরুরি ভিত্তিতে এখন থেকেই মশা নির্মূলে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।