জরিমানার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আগে সচেতনতামূলক সভা অব্যাহত রাখায় নতুন সড়ক আইনে বিদায়ী বছরের শেষ দুইমাসে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের মামলার খাতা রয়েছে শুন্য। আগের ১০ মাসে যেখানে সোয়া দুই কোটি টাকা জরিমানা ও সাড়ে ৩০ হাজার মামলা হয়েছে, সেখানে গত দুইমাসে একটি মামলাও হয়নি।
যদিও বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এমনকি এই আইনে মামলাও হয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে ২০১৯ সালের শেষের দুই মাসে এই আইনে মামলার কোন রেকর্ড নেই ট্রাফিক কার্যালয়ে।
সূত্রমতে, নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যদিয়ে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী নিরাপদ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন শুরু হয়। নতুন এই আইনে বিভিন্ন ধারায় অপরাধের শাস্তি এবং জেল-জরিমানার পরিমান ও মেয়াদ সংযোজন হয়। যে আইনে মৃত্যুদন্ডের বিধানও রয়েছে। ফলে আইন বাস্তবায়নের শুরুতেই নতুন এই আইনের বিরোধিতা শুরু করে শ্রমিক সংগঠনগুলো।
অপরদিকে আন্দোলন এবং সমালচনার মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় স্বল্প পরিসরে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ শুরু হয়। ওই আইনে বেশ কয়েকটি যানবাহন এবং আরোহীদের মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু বরিশালের প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মহানগরী এলাকায় ত্রুটিযুক্ত যানবাহনের বিরুদ্ধে পুরানো আইনে মোট ৩০ হাজার ৫১৪টি মামলা হয়েছে। যার অনুকূলে জরিমানা আদায় করা হয়েছে দুই কোটি ২৬ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৮ টাকা। যার পুরোটাই সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই-প্রশাসন) রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মোট ৩ হাজার ৫৩২টি মামলা ও ২৭ লাখ ১৬ হাজার ১৭৫ টাকা জরিমানা, ফেব্রুয়ারী মাসে ২ হাজার ৭৭৬টি মামলা ও ২০ লাখ ১৯ হাজার ৯৮০ টাকা জরিমানা। মার্চ মাসে ৩ হাজার ৭৯৬টি মামলা ও ২০ লাখ ২৫ হাজার ২৫৫ টাকা জরিমানা। এপ্রিল মাসে ৪ হাজার ৪৩টি মামলা ও ২০ লাখ ৩২ হাজার ৯২০ টাকা জরিমানা। মে মাসে ৩ হাজার ২০৮টি মামলা ও ২০ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৩ টাকা জরিমানা। জুন মাসে ২ হাজার ৩০৫টি মামলা ও ২০ লাখ ৬০ হাজার ৮০৫ টাকা জরিমান। জুলাই মাসে ২ হাজার ৪৪টি মামলা ও ২০ লাখ ৫ হাজার ৪২৫ টাকা জরিমানা, আগস্ট মাসে ২ হাজার ৪৩৮টি মামলা ও ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা। সেপ্টেম্বর মাসে ৩ হাজার ৩০৩টি মামলা ও ২০ লাখ ৮ হাজার ৮৩০ টাকা জরিমানা। অক্টোবর মাসে ৩ হাজার ৬৯টি মামলা ও ২১ লাখ ৫৫ হাজার ৮০৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে যানবাহন বা আরোহীদের বিরুদ্ধে কোন মামলার রেকর্ড নেই বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের ওই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে জরিমানা আদায় আছে। এই দুই মাসের মধ্যে নভেম্বর মাসে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫৫ টাকা এবং ডিসেম্বর মাসে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে শেষ দুই মাসে আদায় হওয়া জরিমানার টাকা পূর্বের বিভিন্ন মাসের বকেয়া টাকা বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
টিআই রবিউল ইসলাম বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বরিশালে এখনো কার্যকর হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আপাতত এই আইনের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী গত নভেম্বর মাস থেকেই বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ মাঠপর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি খুব শিঘ্রই বরিশাল মহানগরীতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ শুরু হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোঃ খায়রুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বরিশাল মহানগরীতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। ইতিপূর্বে মামলাও হয়েছে। তবে নতুন আইন প্রয়োগ একটু কম হচ্ছে। কেননা জরিমানার পরিমাণ বেশি। তাই আগে সচেতনতার জন্য প্রচার প্রচারনা চালানো হচ্ছে।