নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের নলছাপ্রা গ্রামের মোঃ উমর আলীর প্রতিবন্ধী পুত্র মোঃ ইব্রাহিম এক যুগ ধরে একটি নার্সারী করে আসছে। জানা যায়, ১২ বছর আগে মায়ের গলার একটি রূপার চেইন ২৫০ টাকায় বিক্রি করে অন্যের বাড়ীতে ১০০ প্রজাতির চারা রোপন করে নার্সারী সাজিয়ে আসছে। পরবর্তীতে তার মনে বাসনা জাগল বড় একটি নার্সারী করবে। কিন্তু দু॥খের বিষয় ভূমিহীন পরিবার কেমনে নার্সারী সাজাবে? কে দিবে জমি? অনেক চিন্তা-ভাবনা করে অবশেষে গ্রাম ছেড়ে চলে আসে সুন্দরীঘাট গ্রামের এক আদিবাসীর বাড়ীতে। সেখানে এসে আদিবাসীর পতিত দেড় একর জমি নার্সারীর জন্য ২০ হাজার টাকার মধ্যে লিজ নেওয়া হয়। নানান প্রজাতির বীজ সংগ্রহ করে করে ফুল ও ফলের ছোট ছোট চারায় সেই জমিতে নার্সারী সাজিয়ে তুলে। এভাবে দীর্ঘ এক যুগ ধরে প্রতিবন্ধী ইব্রাহীম বন্দকী জমিতে নিজ উদ্যোগে নার্সারী পরিচালনা করে আসছে। এসব চারা সংগ্রহের বিষয়ে জিজ্ঞাস করিলে প্রতিবন্ধী ইব্রাহীম জানায়, মুঠোফোনে বগুরা থেকে কণ্ঠাক করে নিয়ে আসা হয় নানা প্রজাতির বীজ। যেমন চায়না লিচু, বেদেনা, জাম্বুরা, আপেল, বারোমাসী আমড়া, কাঁঠাল, লেবু, নাশপাতি, সিঙ্গেস, কাগজি লেবু, করম জাম, আমলকি, আপেল কুল, আম, টগর এবং গোলাপ, সূর্যমুখী, গন্ধরাজ, টগর, হাসনাহেনা, ক্রিসমাস ষ্টার, ডালিয়া বীজের চারা রোপিত আছে। এভাবে একজন প্রতিবন্ধী তার সফলতার গল্প বলা শুরু করেছে নার্সারীতে বসে বসেই। মাঝেমাঝে বসা থেকে উঠে কুড়া পায়ে কুড়িয়ে কুড়িয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ করে যাচ্ছে। মায়ের গলার রূপার চেইন বিক্রি করে অল্প কয় টাকা পুজি দিয়ে শুরু করেছিলেন তার নার্সারী চাষাবাদ। আজ তাকে সুন্দরীঘাটের মানুষ একনামে সফল নার্সারী চাষী হিসেবে চেনে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সৌখিন মানুষেরা এখানে আসে দেখতে এবং নানা প্রজাতির চারা কিনতে। এলাকার ছোট ছোট ফুল ব্যবসায়ী ভ্যান গাড়ি ভরে সিমান্তের ছোট ছোট হাট-বাজারে বিক্রি করার জন্যও নিয়ে যায়। কিন্তু বড় দু॥খের বিষয় আজও এই প্রতিবন্ধী ইব্রাহীম নার্সারীর জন্য এতটুকু জমি ক্রয় পারেন নি। এমনকি উপজেলার কোন কৃষি কর্মকর্তাও কোন উদ্যোগ নেননি। অযতনে অবহেলায় সীমান্তের পাদদেশে ফুটে আছে প্রতিবন্ধী ইব্রাহীমের এই নার্সারীটি।