রাজবাড়ীতে শুকনো মৌসুমে হঠাৎ দেখা দিয়েছে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন। এর ফলে গোয়ালন্দ উপজেলার নদী তীরবর্তী দেবগ্রাম, দৌলতদিয়ায় ও ছোটকলা বেড়িবাঁধের নদী তীরবর্তী এলাকায় অসময়ের পদ্মা নদী ভাঙ্গনের ফলে কৃষি ও কৃষি জমি ব্যাপক ভাবে নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে। প্রতিদিনই ভাংছে এ অঞ্চলের নানা ধরনের ফসলি জমির ক্ষেত। ভাঙ্গনের ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধরন্ত টমেটো, বেগুন, পেয়াজ, শরিষা, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি বিভিন্ন ধরনের সবজি সহ অন্যান্য ফসল নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকেরা একদিকে কৃষি জমি বিলিন অন্যদিকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পরেছেন। নদী গর্ভে ফসল নষ্ট হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পরেছেন এ অঞ্চলে কৃষকেরা। নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা।
রাজবাড়ীর প্রধান সমস্যাই হচ্ছে নদী ভাঙ্গন সমস্যা। এই নদী ভাঙ্গনের কারনে রাজবাড়ী আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে,যে কারনে প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে জেলার মানচিত্র। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে জেলার পাংশার হাবাসপুর, কালুখালীর রতনদিয়া-শাহ মীরপুর,সদরের মিজানপুর,বরাট,গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা,দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের কৃষি জমি সহ ২১ স্থানে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ও ৯ কিলোমিটার নদী গর্ভে বিলিনের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হলেও বর্তমানেও অসময়ের নদী ভাঙ্গনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ৬ থেকে ৭টি গ্রামের মধ্যে কাওয়ালজানি ,হোসেন মোল্লার পাড়া,আজাহার মাতব্বার পাড়া ,আজিজ সরদার পাড়া ,নতুন পাড়া, ব্যাপারী পাড়া ও ধল্লাপাড়ার ফসলি জমি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যদিও ভাঙ্গনের কারনে নতুন পাড়া ও ধল্লা গ্রাম দুটি নদী গর্ভে সম্পন্ন বিলীন হয়ে গেছে। অথচ এসকল ফসলি জমি রক্ষায় প্রশাসনের ভাঙ্গন রোধে কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা ।
গত বছরের ভাঙ্গনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রামের প্রায় দের হাজার পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। বর্তমানে তারা বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে ,স্কুলে ,সড়কের পাশে ও পরিত্যক্ত স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন সব হারিয়ে ।
ভাঙ্গন কবলিত কৃষক ও এলাকাবাসিরা বলেন, হঠাৎ করে পনের দিন ধরে নদী ভাঙ্গনের ফলে তাদেও কৃষি জমি ও বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। টমেটো ,বেগুন, পেয়াজ, ফুলকপি ,বাঁধাকপি সহ বিভিন্ন কৃষি পন্ন নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে । এতে তারা ব্যাপক ভাবে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পরেছেন।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুল ইসলাম ও ছোট ভাকলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন , পূর্ব থেকেই পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে নদী তীরবর্তী এই লাকা গুলো ভাঙ্গনের ফলে দেবগ্রাম,দৌলতদিয় ও ছোটভাকলা এলাকা ছোট হয়ে গেছে। এবারের ভাঙ্গনের ফলে দেবগ্রামের ১হাজার বিঘা ফসলি জমি ও কয়েকশ বাড়িঘর বিলিন হয়েছে। দ্রুত কাজ না করা হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদী পারের বৃস্তৃীর্ণ কৃষি জমি সহ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে বলেন তারা।
নদী গর্ভে বাড়ি ঘর বিলিন হওয়ায় ভাঙ্গন কবলিতরা এখন দিশেহারা ও কষ্টে জীবন যাপন করছেন,তারা চান ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় এবং অসহায়দের বসবাসের জন্যে নদী তীর বাঁধতে সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শফিকুল ইসলাম শেখ- তিনি বলেন জেলার পাংশার হাবাসপুর থেকে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত ২১টি স্থানে ১৭ কিলোমিটার অংশে প্রায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার পদ্মার ভাঙ্গনে বিলিন হয়েছে। এর মধ্যে পাংশার হাবাসপুর, কালুখালীর রতনদিয়া-শাহ মীরপুর, সদরের মিজানপুর ও গোয়ালন্দের ছোটভাকলা ও দেবগ্রামের বিভিন্নস্থান ভাঙ্গন কবলিত। এই ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী প্রতিরোধের জন্য রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭০০ কোটি এবং বিআইডব্লিউটিএ প্রায় ১ হাজার ১ শত কোটি টাকার ডিপিপি প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রনালয়ে অনুমোদনের জন্যে পাঠিয়েছেন। অনুমোদন হলে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় ভাঙ্গন স্থানে কাজ করা হবে বলে জানান।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলশাদ বেগম বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ ১ হাজার ১শত কোটি টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭ শত কোটি টাকা ব্যয়ে ডিপিপি প্রনয়ন কর মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছেন। ডিপিপি পাশ হয়ে আসলে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই ভাঙ্গন রক্ষায় কাজ করা হবে। আর যারা ভাঙ্গনের ফলে বাড়িঘর ইতমধ্যে বিলিন হয়েছে তাদের ৭শত ক্ষগ্রিস্থ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের সাহাজ্য সহ খাস জমি বন্দেবস্তের মাধ্যমে তাদের পূনর্বাসন করা হবে।