সরকারি হাসপাতালের বহিঃবিভাগের সেবায় অনেকের সমস্যার সমাধান হয় না। প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। কিন্তু বেসরকারি চেম্বার কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসা ব্যয় সাধ্যের বাইরে থাকায়, ভালো চিকিৎসা গ্রহণ অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন পরিস্থিতিতে এক মহৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈকালিক সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। এ সেবা নিতে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মানুষ বিএসএমএমইউতে ভিড় করছে। কিন্তু চাহিদার অনুপাতে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। চিকিৎসা নিতে না পেরে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, রোগী ও তার স্বজনরা এ কার্যক্রমটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলেও সময় স্বল্পতা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনীহায় চাহিদা অনুপাতে রোগীরা গুণগত সেবা পাচ্ছেন না। বিএসএমএমইউতে চালু হওয়া এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পেতে প্রতিদিন সকাল থেকে সহস্রাধিক রোগীর ভিড় হয়। সেবা গ্রহীতাদের দীর্ঘ সারি দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভন্ন সময় রোগী দেখার সময় ও টিকিটের সংখ্যা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েও তার বাস্তবায়ন করেনি। এমন প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সুলভ মূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা নিতে এসে টিকিট সংকট ও রোগী দেখতে চিকিৎসকরা কম সময় দেয়ায় আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
অনেকে সারাদিন অপেক্ষা করেও টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে কিছু লোক হাসপাতালের কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের হাত করে দুপুর ১২টার মধ্যেই বৈকালিক সেবার টিকিট পাচ্ছেন। এছাড়া ২৪টি বিভাগে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এই স্বল্প সময়ে একজন অধ্যাপক বা সহযোগী, সহকারী অধ্যাপকের সঙ্গে দু-তিনজন আবাসিক চিকিৎসক রোগী দেখলেও মেডিসিন, নিউরোমেডিসিন, নিউরোলজি, লিভার, রিউমাটোলজি, এন্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ফলোআপসহ ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি রোগী দেখেন না। ফলে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে রোগী এসেও সেবা বঞ্চিত হন। এর ওপর হাসপাতালের স্টাফদের কারসাজি ও নিরাপত্তাকর্মীদের টিকিট ব্যাণিজ তো রয়েছেই।
বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এই সেবা চালু করেছিলেন। কিন্তু তখন থেকেই প্রায় প্রতিটা বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক চিকিৎসকরা এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাননি। ডাক্তারদের বৈকালিক সেবাদানের প্রতি মনযোগী না হওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, বৈকালিক সেবায় একজন চিকিৎসক সর্বোচ্চ ১৫/২০ জন রোগী দেখে যে সম্মানী পান, সেই একই সময় যদি তিনি প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন তা হলে বিভিন্ন দিক থেকে এর চেয়ে অন্তত দশগুণ বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বৈকালিক সেবাদানের প্রতি মনযোগ ও আগ্রহ কম থাকে।
আমরা মনে করি একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই বৈকালিক সেবা চালু হয়েছে। খাদ্য-বাসস্থানের মতো চিকিৎসা মানুষের অন্যতম অধিকার। আমরা আশা করি, সরকারি হাপাতালগুলোতে আগামীতে বৈকালিক ছাড়াও নৈশ সেবা চালুর সাথে সেবা কার্যক্রমের গুণগতমান ও পরিধি আরও বাড়ানো হবে।