নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার শৈলাডহর গ্রামে বিয়ের তিন মাস সময়ে ১মাসের গর্ভবতী অবস্থায় স্বামীকে হারান জামেনা খাতুন(৫৭)। তাঁর স্বামী মৃত: আবদুল সামাদ,২নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের বারমারী গ্রামে তার বিয়ে হয়। জীবন যুদ্ধে হার না মানা জামেনা খাতুন তাঁর একমাত্র প্রতিবন্ধি সন্তান সাইকুল ইসলাম ওরফে জাকির হোসেন(৩৫)কে নিয়ে শৈলাডহর বোনের বাড়ীতে ৪৫বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বোনের বাড়িতে আশ্রয়ের কিছুদিন পরেই বোন ও ভগ্নিপতি মারা যান। বোনের ছেলে চাঁন মিয়া ফকিরের বাড়ীই এখন ওদের শেষ আশ্রয়স্থল। পনের বছর পূর্বে কারিতাসের সৌজন্যে একটি টিনসেড ঘর নির্মাণ করে বোন আমেনা খাতুনকে। আর সেই ঘরের পাশে তিনটি পুরনো টিনের পাতা একত্র করে,ঝুঁপড়ি দিয়ে ডেকে কোনরকম এই পুরো মানবেতর শীত পার করছেন এ পরিবারটি। শীতে জবুথবু অবস্থায় কেউ এগিয়ে আসেনি,শীত বস্ত্রের অভাবে সাইকুল ইসলাম ওরফে জাকির হোসেন প্রায় সময়ই হাই মাউ করে চিল্লাচিল্লি করে থাকে। তাঁর ক্রন্দনে চোঁখের পাতা এক করতে পারেননি মা জামেনা খাতুন। প্রায় সময় ওর মাথা আগুনের মতো গরম হয়ে যায়। তখন ওর মাথা নিজেই ভেঙ্গে ফেলতে চায়। মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলে। এমনকি তাঁর মাকে কামড়াতে শুরু করে। নিজের শরীর নিজেই নখ দিয়ে আচর কাটতে থাকে। সারা শরীর দিয়ে রক্ত বের করে ফেলে সে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকে বাক প্রতিবন্ধি জাকির হোসেন। বিধবা জামেনা খাতুন প্রতিনিধিকে জানান, ১ মাসের গর্ভবতী থাকাবস্থায় ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আর কোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। শিশুর দিকে থাকিয়ে সারা জীবনটা পার করতে চাই। আল্লাহর কাছে নামাজ পরে দোয়া করি আমার সন্তানের মৃত্যুর পর যেন আমার মৃত্যু হয়। আমি মরে গেলে এ দুনিয়াতে আমার সন্তানের সেবা করার মতো আর কেউ নেই। আমি দিন আনি দিন খাই। প্রতিদিন ওর গলায় রশি ঝুঁলিয়ে দুর্গাপুর পৌর সদর সহ আশপাশের বাজারে সাহায্য তুলতে যাই। দিন খারাপ থাকলে বারান্দায় বেঁধে রেখে যাই। কখনও আবার গলার রশির বাঁধ খুলে ফেলে চলে যায়। অন্যের বাড়ীতে গেলে ওকে বাঁশ দিয়ে মারতে চায়। ওর গেঞ্জি ও চশমা দেখলে খুব খুশি হয়। জন্মের ৭বছরের মাথায় ও হাঁটতে শিখেছে। অল্প কিছু ধরে ওর মুখ থেকে হাম্মা,কখনও আম্মা ডাক শুনতে পাই। আমার বিশ^াস মাথার চিকিৎসা করলে হয়তো আমার কলিজার টুকরা সন্তান ভাল হয়ে যেতো। সরকার ও সমাজের বিত্তশালীদের কাছে তিনি দাবী রেখে বলেন, অন্যের বাড়ীতে জীবন পার করছি,আমার একটু মাথা গোঁজার জায়গা ও বাসস্থান তৈরী,একটি নলকূপ স্থাপন,ছেলের চিকিৎসা করার সহযোগিতা কামনা করেণ সে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা বলেন, শুনেছি এ পরিবারটি অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। অচিরেই পরিবারটির পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম প্রতিনিধিকে জানান,মা ও ছেলে দুজনেই সমাজসেবা কর্তৃক ভাতাভোগীর আওতায় এসেছে। অচিরেই ওদের জায়গার ব্যবস্থা করা হবে। দ্রুততার সাথে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।