রংপুর সদর উপজেলার দেবীপুরে অবস্থিত পাগলাপীর অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ২০১২ সালে স্থাপিত হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক বিকাশ প্রসারে ছড়াচ্ছে ব্যতিক্রমী শিক্ষার আলো। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক উমর ফারুক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হকসহ সকল শিক্ষক কর্মচারী অদ্যাবধি পর্যন্ত বেতন না পেয়েও স্বেচ্ছাশ্রমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে আসছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে বিদ্যালয়টি। অত্র বিদ্যালয়ে অটিজম, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন্স সিনড্রোম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিসহ প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে নিরলস পরিশ্রম করে আসছেন শিক্ষকরা। শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচী, মূল্যালয়ন, পরিদর্শন ও তদারকি করা সহ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক বিকাশে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের চাহিদার আলোকে অডিওলজিক্যাল পরিক্ষা, হেয়ারিং এইড, ফিজিও থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি বিহেভিওরাল থেরাপি, কাউন্সিলিং এবং শরীর চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য পাঠদান উপকরণ হিসাবে ট্রেইলর ফ্রেম, টকিংবুক, হুইল চেয়ার, লোভিশন গ্লাস, পেন্সিল গ্রিপস, বুকহোল্ডার, রিডিং স্ট্যান্ড, সাইন ল্যাংগুয়েজ উপকরণ, সাড়াছড়ি, হেয়ারিং এইড, ক্রাচ, গ্লোব, ম্যাপ, ফøাশ কারড, টকিং ক্যালকুলেটর, স্কীন রিডারসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণসহ ছবির বই, পুঁতি, ডিসপ্লেবোর্ড, পাপেট, কাঠি, ব্লোক, পাজেল এবং ফ্লোরমেট রয়েছে। অধিক বয়সী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ এবং গুরুতর শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রহিয়াছে।
পাগলাপীর গ্রামের শিক্ষানুরাগী নাসির উদ্দিন রাসেল জানান, প্রতিন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, বিভিন্ন শিক্ষা কারিগরি প্রশিক্ষণ, কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও মানসিক বিকাশে ২০১২ সালে পাগলাপীর অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান শুরু করেন। প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা সহায়ক ও কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে বেতন না পেয়েও ৩৬৯জন শিক্ষার্থীকে নিয়মিতভাবে পাঠদান দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছেন। সরকারি ও বেসকারি সুযোগ সুবিধা ছাড়াই নিয়মিভাবে প্রষ্ঠিানটি পরিচালনা করছেন। অভিভাবকরা বলেন শিক্ষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে খেয়ে না খেয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে নিয়মিতভাবে লেখাপড়া করাচ্ছেন।
সহকারী শিক্ষকরা বলেন, বিনা বেতনে চাকরি করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো ছড়াতে কাজ করছি। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছি।
প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক উমর ফারুক বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা বেতন না পেয়েও সঠিকভাবে পাঠদান করে আসছি। শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি দ্রুতই প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির জন্য সরকারের সু দৃষ্টি কামনা করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষকরা বেতন ভাতা পেলে তারা মানবেতর জীবন যাপন থেকে মুক্তি পেত। সেই সাথে তিনি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার আফতাবুর রহমান, শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সমাজ সেবা কর্মকর্তা শিখা রানী রায়, সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র কর্মকর্তা তাপস কুমার বর্মা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ে পাঠদান ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনিও বিদ্যালয়টি এমপিও ভূক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।