কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গত কয়েক বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও সেভাবে আয় বৃদ্ধি পায়নি। এতে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত পর্যায়ের মানুষকে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা নানা সুযোগ ও ছুতোয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের তোষণ নয়, শাসন করতে হবে। বাজারে সৃষ্ট অস্থিরতা বন্ধে কঠোর পথে হাঁটতে হবে সরকারকে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে বসবাসরত সীমিত আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় কী করে পরিবারের খরচ মেটানো হবে, এটাই সীমিত আয়ের মানুষের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইতিপূর্বে পেঁয়াজ সরবরাহ নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকায়ও বাজারের প্রচলিত নিয়ম বা ব্যাকরণ মানছে না পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম হলেও দাম বাড়ার জের এখনো রয়ে গেছে। এছাড়া শীতের সবজির দামও বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সাধারণের হা-হুতাশের কমতি নেই। পকেটের সঙ্গে বাজারের সমন্বয় করা মুশকিল। সাধারণের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যে ফারাক, তা জীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য যথেষ্ট। সর্বত্রই দাম কমবেশি বাড়ছেই। কমার তালিকায় একটিও নেই। বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করতে চান। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, সয়াবিন, পাম তেল ও চিনির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলা হলেও একটি বিষয় দেখা যায়, তা হচ্ছে বাংলাদেশে বিশ্ববাজারের তুলনায় দাম সবসময়ই বেশি থাকে। বস্তুত বাড়ি ভাড়া ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে বর্তমানে অনেক সীমিত আয়ের মানুষের অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে তারা জরুরি প্রয়োজনেও সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না।
বিশেষ করে বিভিন্ন পণ্যের দাম যাতে অসহনীয় পর্যায়ে না যায় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। অতীতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে ভোক্তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এমন অবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সঠিক তদারকি ও প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে থাকে। কারসাজি বা সিন্ডিকেটের এমন তৎপরতায় যেমন ভোক্তাস্বার্থ ক্ষুণœ হয়, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা-েও পড়ে এর বিরূপ প্রভাব। এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, চাল, ডাল, তেল, নুনের মতো নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবও অনেক। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের দামে আগুন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। রোজা আসছে। রোজার সময় কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা প্রতিবছরই লক্ষ করা যায়। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।