ঢাকা ওয়াসা আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য পানির মূল্য প্রায় শতভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে। নগরীতে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি দিতে না পারার অভিযোগের মধ্যেই এ দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হল। ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক সংযোগে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির বর্তমান মূল্য ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা; বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগে প্রতি হাজার লিটার পানির বর্তমান মূল্য ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আবাসিকে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম বাড়ছে ৮ টাকা ৪৩ পয়সা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্পে পানির দাম বাড়ছে ২৭ টাকা ৯৬ পয়সা। যেটা বর্তমান মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ। বছরে একবার এবং ৫ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর ধারাবাহিক ঐতিহ্য থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াসা যেন দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অপচয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
বারবার পানির মূল্য বাড়িয়ে এবং দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নতুন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বাস্তবায়ন করেও নগরবাসিকে প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না ওয়াসা। পানির সঙ্কট ও দুর্গন্ধের সমাধান না করে দাম বাড়ানো ওয়াসার যথেচ্ছাচার মনোভাবের প্রতিফলন বলে আমরা মনে করি। অনৈতিক পন্থায় গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ওয়াসার একশ্রেণির মিটার রিডার থেকে শুরু করে সিবিএ নেতা পর্যন্ত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য রয়েছে। এসব দুর্নীতি, অপচয় ও অব্যবস্থাপনা দূর করে ওয়াসার লোকসান দূর করার পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানো সম্ভব। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সে উদ্যোগের বদলে, ঘুষ, দুর্নীতির চোরাপথ উন্মুক্ত রেখে, জনগণের সুবিধাকে প্রাধান্য না দিয়ে বার বার মূল্যবৃদ্ধি কাম্য নয়।
ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার ঘাটতি রেখে পানির যে সরবরাহ করছে তার প্রায় সবই দূষিত, দুর্গন্ধযুক্ত, সরাসরি ব্যবহারের অনুপযুক্ত। ইতিপূর্বে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দূষিত, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের বিরুদ্ধে নগরবাসি প্রতিবাদি হয়ে উঠলে তা সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। ব্যর্থতা স্বীকার না করে তা অস্বীকার করায় ঢাকা দক্ষিণের শ্যামপুরের বাসিন্দারা ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে ওয়াসার এমডিকে খাওয়াতে গিয়েছিলেন। গত বছর টিআইবির এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ঢাকা নগরীর প্রায় অর্ধেক গ্রাহক তাদের চাহিদা অনুসারে পানি সরবরাহ পায়না। এছাড়া শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ গ্রাহককে পানি ফোটাতে গিয়ে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস অপচয় হয়। নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির কারণে যেমন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বহ হয়ে পড়ছে, একইভাবে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানিসহ সরকারি সেবাখাতগুলোর অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। গ্রাহকপর্যায়ে পানির মূল্য বাড়ানোর গতানুগতিক ব্যবস্থার বদলে দুর্নীতি, অপচয় ও অস্বচ্ছতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি।