বাংলা প্রবাদ ’তিলকে তাল করা’। সামান্য কোনো ঘটনাকে রঙ চঙ লাগিয়ে বড় করে উপস্থাপনের মাধ্যমে উদ্দেশ্য সাধনের অর্থে এ প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। জামালপুরের ইসলামপুর জে. জে. কে. এম. হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘অধ্যক্ষ-ছাত্রী’ মধ্যোকার ঘটনাটিও হয়তো হতে পারে, তিলকে তাল করারই নামান্তর মাত্র। কারণ শিক্ষক এমনই পেশা যার নাম নিলে বলতে হয়না লোকটি আর যাই হোক, কিন্তু নিশ্চয় তিনি যে ‘চরিত্রহীন’, ‘লম্পট’ কিংবা ‘রাঘব বোয়াল’ নয়, এমনটি বুঝতে বাকি থাকবার কথা নয়। তবে যারা শিক্ষকতার অন্তরালে বেমানান কর্মে লিপ্ত, তারা শিক্ষক নয়, বরং শিক্ষক নামের কলঙ্ক।
আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কামরা থেকে ওই কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুছ ছালাম চৌধুরীকে একই কলেজের প্রাক্তন অনার্স পড়ুয়া এক ছাত্রীসহ গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আটক করে জামালপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রী কোনো অভিযোগ না করলেও রেলওয়ের আইন ভঙ্গ করার অপরাধে দুজনকেই আসামি করে রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
জানা যায়, ঘটনার দিন বেলা ১২টার দিকে ইসলামপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জামালপুর রেলস্টেশন থেকে ওই ছাত্রীকে সাথে নিয়ে ট্রেনে ওঠেন অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম চৌধুরী। ট্রেনটির একটি কামরা বুকিং করে দু’জনের জন্যই টিকিট কাটেন অধ্যক্ষ। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর দুজনের অবস্থান নিয়ে অভিযোগ তোলেন কয়েকজন যুবক। তারা ট্রেনে কর্তব্যরত রেলওয়ের জিআরপি পুলিশ সদস্যদের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানায়। জিআরপি পুলিশ অধ্যক্ষ ও ওই ছাত্রীকে আটক করে প্রথমে ট্রেনটির শেষ গন্তব্যস্থল দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে নামিয়ে রেলওয়ের জিআরপি পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে ফিরতি ঢাকামুখী একই ট্রেনেই জামালপুর রেলওয়ে থানায় আনা হয় তাদের। অধ্যক্ষ বিবাহিত এবং জামালপুর শহরের বেলটিয়া এলাকায় তার বাড়ি।
এদিকে সন্ধ্যায় রেলওয়ে থানার ওসির কক্ষে ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের জানান, অধ্যক্ষ স্যার আমার শিক্ষক। স্যার আমাকে বলেছেন তাই তার সাথেই ট্রেনে ইসলামপুরে যাচ্ছিলাম। তার সাথে আমার অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। ট্রেনের কেবিনেও তিনি আমার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেননি। অধ্যক্ষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, দুটি ছেলে কয়েকদিন ধরে আমাকে ফলো করছিল। ওরাই হয়তো আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ষড়ন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সে আমার ছাত্রী। তাই আমরা একই সাথে ট্রেনে যাচ্ছিলাম, এর বেশিকিছু নয়।
জামালপুর রেলওয়ে থানার ওসি তাপস চন্দ্র প-িত গণমাধ্যমে জানান, ‘অধ্যক্ষ ও ছাত্রীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রী তার অধ্যক্ষের দ্বারা কোনোরূপ হয়রানির শিকার হয়নি বলে জানিয়েছে। তাই সে থানায় কোনো অভিযোগও করবে না। অধ্যক্ষও তার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তবে ছাত্রীটি অভিযোগ না করলেও কিছু যাত্রী যেহেতু ট্রেনের কেবিনে অধ্যক্ষ ও ছাত্রীর অবস্থান নিয়ে আপত্তি তুলেছে রেলওয়ের আইন অনুযায়ী তারা দু’জনই অপরাধী। তাই পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে।’
ওইদিন রাতে মুচলিকা দিয়ে অধ্যক্ষ-ছাত্রী উভয় মুক্তি পেলেও এ ঘটনার পর থেকে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে পোস্টারিং, মিছিল, মিটিং থেকে শুরু করে সংবাদ সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেেখছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এতে সাথে যোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্কমীরাও।
উল্লেখ্য, ট্রেনের কেবিনে অধ্যক্ষ-ছাত্রীর রহস্যজনক অবস্থানের খবর পেয়ে ঘটনার দিন আমি নিজে কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনে গিয়েছিলাম। খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছি ঘটনাটি। এতে আইনের ছাত্র হিসেবে আমি ওই ঘটনাটি কোনোক্রমেই ‘ধর্ষণ’ আখ্যায়িত করতে পারিনি। হতে পারে অন্য অপরাধে অধ্যক্ষ অপরাধী। পরবর্তীতে ভাগ্যবিড়ম্বনা অধ্যক্ষ আর ওই ছাত্রীর অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি যেভাবে কতিপয় গণমাধ্যমে আর লোকমুখে চাউর হল, তাতে সত্যি বিচলিত না হলেও বিস্ময় হতে হয়েছে। কারণ, ছাত্রী কোনো অভিযোগ না করলেও চারিদিকে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে, অধ্যক্ষ নাকি ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে! এমন হীনখবরে চা কাপে ঝড় বইছে। অধ্যক্ষের শাস্তি চেয়ে রাজপথও গরম করে তোলা হচ্ছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করায় ‘ধর্ষণ তকমায়’ ওই ছাত্রীর চৌদ্দ গোষ্ঠীর কূলমান উদ্ধার করা হচ্ছে অধ্যক্ষের অপসারণ কর্মসূচিতে! লাজ-শরমে লোকচক্ষুর আড়ালে যেতে বাধ্য হয়েছে ওই ছাত্রীসহ তার পরিবারের লোকজন।
অধ্যক্ষের অপসারণ কর্মসূচিতে যোগ করা হয়েছে, তিনি নাকি ইতোপূর্বে একাধিকবার এমনহীন ঘটনার অভিযোগে অভিযুক্ত। সেকারণেই সুযোগে সদ্ব্যবহার। এবার প্রতিষ্ঠানকে ‘অভিযুক্ত অধ্যক্ষমুক্ত’ করতে তার সহকর্মীসহ অনেকেই বদ্ধপরিকর। নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষ আব্দুছ ছালাম চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে প্রতিষ্ঠানের হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে ‘দুর্নীতিপরায়ণ, চরিত্রহীন, লম্পট, অর্থ আত্মসাৎকারী ও নারী ধর্ষণকারী’ ইত্যেকার নানাবিধ বেমানান অভিধায় আখ্যায়িত করা হয় অধ্যক্ষকে। ভাগ্যক্রমে ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য আগে ভাগেই আমন্ত্রণ পেয়ে ছিলাম। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকদের নিকট প্রশ্ন রেখে ছিলাম, ওই ছাত্রী যেখানে অভিযোগ করেনি, সেখানে ‘ধর্ষণ’ তকমায় কীরূপে অধ্যক্ষকে অভিযুক্ত করা হল? এতে কি প্রচলিত আইন লঙ্ঘল করা হল না? রাজপথে অধ্যক্ষের শাস্তি তথা ফাঁসি দাবিসহ নানাবিধ অশালীন স্লোগানগুলোরই কি-বা আইনসিদ্ধ? যদি ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করতে না পারা যায়, তবে কি অধ্যক্ষ আর ওই ছাত্রীর ওপর অবিচার করা হল না? রাষ্ট্র তথা পুলিশ যেখানে ধর্ষণের আলামত পায়নি, ধর্ষিতা ছাড়া সেখানে কীরূপে ধর্ষণ প্রমাণ করা যাবে? আমার এসব প্রশ্নের সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের জবাবে উপস্থিত সচেতন মহলের নিকট পরিষ্কার হয়নি যে, প্রকৃতভাবেই ধর্ষণের অপরাধে ওই অধ্যক্ষ অপরাধী। এছাড়া ভয়ভীতিতে ভূক্তভোগি ওই ছাত্রী ধর্ষণের বিচার চাইতে পারছে না।
সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সচেতন এলাকাবাসী শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরে প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় বক্তারা ধর্ষণকারী অধ্যক্ষকে ইসলামপুরে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ ওই ছাত্রী ধর্ষণকারী অধ্যক্ষের বিরদ্ধে মামলা না করায় তার পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট ঘোষণা করা হয়। পরে শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি দেন।
প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে অধ্যক্ষের বসার চেয়ারটিও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে অধ্যক্ষের সহকর্মী শিক্ষকরা। অশালীন ভাষার আক্রমণও করা হচ্ছে অধ্যক্ষে। রাজপথে মিটিং মিছিলে স্লোগান দেয়া হয়েছে- ‘...দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘...তার চামড়া, তুলে নেবো আমরা’। প্রায় প্রতিনিয়তই চলছে অধ্যক্ষের অপসারণ কর্মসূচি। জেলা প্রশাসক ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।
প্রশ্ন হল, যদি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা না মেলে, তবে কি অধ্যক্ষের ওপর অবিচার করা হল না? ওই ছাত্রীর তার পরিবারেরই কি-বা সম্মান অবশিষ্ট থাকলো যে, তা দিয়ে সমাজে কূলমান রক্ষা পাবে? এখানে অধ্যক্ষ যে নিষ্পাপ, তা কিন্তু বলছি না। তবে তিনি অন্তত পক্ষে তার ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অপরাধে অপরাধী, এমন খবর চাউর করা নিতান্তই নিষ্কণ্টক নয়। বরং দালিলিক প্রমাণ হাতে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও অধ্যক্ষের দ্বারা নিগৃহের ব্যক্তিদের পিছনে থেকে অধ্যক্ষের বিচার দাবি করাটা যৌক্তিক হতো।
জানা যায়, ইসলামপুর জে. জে. কে. এম. গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজটি ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত জেলার সর্ববৃহৎ নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিণত হয়েছে। উপজেলা সদরের শতাব্দীর প্রাচীনতম একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরপর তিন বছর জাতীয় স্কাউটসে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় বাল্য বিবাহ রোধ ও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
এ প্রতিষ্ঠানটিতে মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, ভোকেশনাল এবং এইচএসসি (বি.এম) সহ চারটি শাখা বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী ও অর্ধশতাধি শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন। চারতলা ভবন, দুইটি দ্বিতল ভবনসহ ৭টি ভবন এবং ছাত্রী হোস্টেল, লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার ও সুসজ্জিত কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব জমির পরিমাণ ২ একর ৮০ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জেলার সর্বাধিক শিক্ষার্থী এ উপজেলার সর্বোচ্চ ফলাফলও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়াও যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ভাঙনকবলীত অনগ্রসর জনপদের নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দক্ষ শিক্ষকম-লী বিদ্যমান থাকার বিবেচনায় এ উপজেলায় কোনো সরকারি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের দাবিতে স্থানীয়রা ইতোমধ্যে একাধিকবার মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
গত ২০১৯ সালে ২৬ জানুয়ারি মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ওই প্রতিষ্ঠানে। অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল। মা সমাবেশের উদ্বোধন করেন এমপির সহধর্মীনী আফরোজ হক। সমাবেশে ছাত্রীরা নিজ নিজ মায়ের পা ধুঁয়ে দিয়ে পরম মমতাময়ী মায়ের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা জানায়। এ ঘটনাটি ব্যাপক সম্মানে আসীন করে অধ্যক্ষ আব্দুছ ছালাম চৌধুরীকে।
আমাদের চারপাশে তিলকে তাল করার নজির মেলে। তিলকে তাল বানিয়ে বিশ্বজুড়ে অমর হয়ে আছেন জার্মানির এক নায়ক এডামপ্ট হিটলারের প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলসিও। শুধু ভাষণ-বক্তৃতায় নয়, খোদ রেডিও, খবরের কাগজে গুজবের বেসাতি ছড়িয়ে প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দেয়া আর স্বজাতির মনে সরকারের আনুগত্য সৃষ্টিটাই যার উদ্দেশ্য ছিল, সে মানুষটাই জোসেফ গোয়েবলসিও।
সাতচল্লিশ বছরের জীবনে গোয়েবলসিও অর্ধেক দুনিয়ার ঘৃণা অর্জন করে নিয়েছিলেন স্বীয় হীনকীর্তিকলাপে। গোয়েবলসিওর সূত্রই ছিল- ‘একটা মিথ্যাকে দশবার বলো, একশোবার বলো, সেটা সত্যির মতো শোনাবে।’
বলা যায়, অপপ্রচারণা চালানোর দায়িত্বটাই দেয়া হয় গোয়েবলসিওকে। কিন্তু ‘পাপ না করে মাফ’ বলে একটি কথা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের পতন ঘটলে পরাজয় আসন্ন বুঝতে পারেন জোসেফ গোয়েবলসিও। আত্মহত্যা করে গোয়েবলসিও দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও এখনো রয়ে গেছে তার হীনকৃতকলাপের ছায়া। সমাজে একটা কিছু হলেই ওঠে পড়ে লেগে যেতে সময় লাগে না।
তিলকে তাল বানিয়ে মানুষের ইজ্জত হরণ করা সাধারণ লোক তো বটেই; কোনো সাংবাদিকের নৈতিকতা নয়। রাজনৈতিকদের রাজনীতিও নয়। যারা এমন নোংরামীতে লিপ্ত, তারা সৎপথে কলম চালানো সাংবাদিকদের জন্য এক অসহনীয় সাংঘাতিক অপবাদের যেমন কালিমা! অপরদিকে প্রকৃত রাজনৈতিকদের পথের কাটাও বটে। সমাজে ঠুনকো কিছু ঘটলে একশ্রেণির রাজনৈতিক সুবিধাভোগী চাটুকারেরা সেটাকে রঙ চঙ মেখে সাজাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এগুলো আজকের সমাজের জন্য এক মরণব্যাধি ক্যান্সার, ধীরে ধীরে সমাজকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
বলা বাহুল্য, ভিকটিম যদি ধর্ষণের অভিযোগ না করে, ধর্ষিতা ধর্ষিত হওয়ার কথা স্বীকার না করে, এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের রাজপথে আন্দোলন কিংবা হৈচৈ প্রচলিত আইনে তা একদম বেমানানই বটে। অন্যদিকে কারোর দ্বারা নিগৃহের পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যদি প্রতিপক্ষের ভয়ভীতিতে বিচার চাইতে সাহস না পায়, এক্ষেত্রে ভেবে দেখবার বিষয়।
আমরা বলতে চাই, প্রকৃতপক্ষেই যদি অধ্যক্ষ অপরাধী হয়েই থাকে, সেটা গোপন রাখাই হবে অপরাধীকে লাই দেওয়া। এক্ষেত্রে অপরাধীর বিচার দাবিই হবে সাধুবীর সাবধানতা। বিচারের কাঠগড়ায় অপরাধীকে দাঁড় করানোই হবে ঈমানদারদের ঈমানিকাজ।
মনে রাখতে হবে, একমুঠি অ্যাকশন, এক চিমটি কাতুকুতু, আধা সের সস্তা আবেগ এবং বাহারি-রকমারি কিংবা অশ্রাব্য স্লোগানের মিশ্রণ দিয়ে আর যাই হোক, মিথ্যাকে যেমন প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তেমনই ঢেকে রাখা যায় না সত্যকেও। তিলকে তাল বানানো মানুষের কাজ নয়। অপরাধ করে ‘সাধু’ সাজা ঈমানদারের আমলও নয়। সুতরাং সাবধান ‘ঈমানদার’।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)