কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা (আফজলিয়া পাড়ার) পশ্চিমে কৃষকের নতুন রোপনকৃত ধান লবনাক্ত পানিতে নষ্ট হওয়ায় প্রায় শতাধিক গরীব কৃষক সিমাহীন দু'চিন্তায় পড়ে গেছেন। জানা যায়, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য ইউনুছখালীর পশ্চিমে কোহেলিয়া নদী হইতে চকরিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪৪ কিলোমিটার ৪ লেইনের একটি বড় পরিসরে সড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে কোল-পাওয়ার কর্তৃপক্ষ। কোল-পাওয়ার কর্তৃপক্ষ সড়ক ও সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করলে ওই সড়কটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় মীর আকতার হোসেন কনস্ট্রাকশন লিঃ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এরইমধ্যে সড়ক ও কোহেলিয়া নদীতে সেতু নির্মাণে কাজ করার জন্য আফজলিয়া পাড়ার পশ্চিমে ৩ বছরের চুক্তিতে ফসলি জমি ভাড়া নিয়ে বর্তমানে ঐ জমির উপর অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করেন। একই সাথে এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সড়ক ও সেতু নির্মাণে কাজের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি মজুদ করতে তাদের ভাড়া করা জমিতে সাগর থেকে উত্তোলন করা বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু এই সাগরের লোনা বালি থেকে লবনাক্ত পানি পাশ্ববর্তী কৃষকের ধানি জমিতে পড়ায় বর্তমানে প্রায় ১২ একর মত নতুন রোপনকৃত ধান চাষ নষ্ট হয়ে গেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী চাষীরা মীর আকতার হোসেন লিঃ এর প্রজেক্ট কর্মকর্তাদের বহুবার অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পায় নি। বরং এনিয়ে মীর আকতার হোসেন লিঃ এর প্রজেক্ট কর্মকর্তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই, তাদের অবহেলায় কৃষকের এমন ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী চাষীরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষী আবু আহমদ, নুরুল ইসলাম, আবদুল আজিজ, সাহাবউদ্দিন, মোঃ মুছা, জিয়াউর রহমান, মোঃ সৈয়দ, কাসেম ও রুহুল আমিন জানান, মীর আকতার হোসেন লিঃ এর দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রজেক্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী কে বার বার বলা সত্বেও তিনি এ ব্যাপারে কোন পাত্তাই দেন না। প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীর কারনেই কৃষকের ধান ক্ষেত লবন পানিতে নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও চাষীরা তাদের ধান চাষের ক্ষতিপূরণ চেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে এলাকার সচেতন মহল মীর আকতার হোসেন লিঃ এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই মীর আকতার কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট কর্মকর্তারা কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাধারন জনগনের ক্ষতি করে তাদের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার সাধারন লোকজন জানান, দেশের উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে মহেশখালীবাসির একমাত্র আয়ের উৎসটুকু দান করে দিয়েছেন। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহেশখালী মানুষের উপর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহেশখালীর জনগন যাতে কোন ধরনের হয়রানী কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করার জন্য কোল-পাওয়ার সহ সংশ্লিষ্ট নির্মাণ কোম্পানীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা কে মহেশখালীতে কর্মরত কিছু অসাধু নির্মাণ কোম্পানি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনগনের ক্ষতি করে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভিঘেœ। এমতবস্থায় মহেশখালীর জনগন বিভিন্ন এসব দুর্নীতি গ্রস্ত কোম্পানীর কাছে জিম্মি হয়ে অসহায়ত্ব দিন যাপন করে যাচ্ছে। এরকম এক শোষণকারী নির্মাণ কোম্পানি মীর আকতার হোসেন লিঃ, তাদের অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রাখার জায়গায় সাগর থেকে বালি এনে ভরাট করতে গিয়ে পাশ্ববর্তী ধান চাষ গুলো লবনাক্ত পানিতে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। অপর দিকে মীর আকতার হোসেন লিঃ এর কাছ থেকে মাটি ভরাটের কাজ নেয় স্থানীয় দুইটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কৃষকের ধান চাষ নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে এই সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরাও দায়সারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলেছেন আমরা শুধু মাটি ভরাটের কাজ নিয়েছি, সেখানে কারো কি হচ্ছে তা আমাদের দেখার বিষয়। মুলত স্থানীয় এই ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের কাছেও একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিগন। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি বলে জানান ভুক্তভোগী চাষীরা। মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কাইছার উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের অনুরোধে আমি নষ্ট হওয়া ধান চাষ গুলি দেখতে সরজমিনে গিয়ে ছিলাম। আমি বাস্তবে যা দেখলাম আসলে নতুন রোপনকৃত ধানের চারা গুলি লবনাক্ত পানির কারনেই মারা গেছে। এর আশপাশে এখনো যে ধান গুলো ঠিকে আছে সে গুলোও ধিরে ধিরে মারা যেতে পারে, কারণ আমি ঐ জমিনের পানি খেয়ে দেখলাম এখনো লবনাক্ত রয়েছে। এটা কৃষকের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। এদিকে কৃষকের নতুন রোপনকৃত ধানের চারা লবনাক্ত পানিতে নষ্ট হয়নি বলে অসীকার করে মীর আকতার হোসেন কনস্ট্রাকশন লিঃ এর প্রজেক্টে দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের মাটি ভরাটের সাইট থেকে পানি গিয়ে কৃষকের ধান চাষ নষ্ট নয়নি। মুলত নতুন ধানের চারা প্রথমে রোপন করলে মরাই দেখা যায়, পরে এগুলো আস্তে আস্তে সবুজ হয়ে যায়। এবং আমরা কাজের শুরুতে বাঁধ দিয়ে মাটি ভরাট করছি, সুতরাং আমাদের এখান থেকে পানি যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। কৃষকের রোপনকৃত ধান তাদের লবনাক্ত পানিতে মারা যায় নি বলেও জানান তিনি। অপর দিকে মীর আকতার হোসেন কনস্ট্রাকশন লিঃ এর এ নেক্কার জনক কর্মকা-ে দিন দিন ফুসে উঠছে স্থানীয় জনগন। তারা (মীর আকতার) যদি তড়িৎ কোন সুরাহা না করলে যে কোন মুহুর্তে এই কোম্পানীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তাই এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের মাননীয় এমপি আলহাজ¦ আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজারের মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী চাষীরা।